আখতার-উজ-জামান : কোভিড-১৯ মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে অচল হয়ে যাওয়া সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশেও এর প্রভাব কম নয়। কোভিড-১৯ মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবের সময়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে এসব পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে বেঁচে যাওয়া পোশাক শ্রমিকরা। দেশের ভয়াবহ রানা প্লাজায় ধ্বসে পড়ার ঘটনা এই দূর্যোগময় মুহূর্তে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কাজ করা এসব পোশাক শ্রমিকদের আর্তনাদ আরো নতুর করে মোড় নিচ্ছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত রানা প্লাজা ধসের আজ (২৪ এপ্রিল) সাত বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গার্মেন্টস কারখানা খুলে এতো শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের কারো এখনও শাস্তি হয়নি। রানা প্লাজার মামলা চলছেই। নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকরা নানাভাবে আর্থিক সহায়তা পেলেও সবাই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। রানা প্লাজার সেই জায়গাটি পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তুপ। এই ভয়াবহ দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে শোনা যায় এখনও কিছু হতাশা আর ক্ষোভের কথা। যেখানে কিছু কিছু অসাধু লোকেরা মিথ্যা অজুহাতে অর্থ আত্মসাৎ করে এসব বেঁচে যাওয়া এবং পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে থাকা রানাপ্লাজায় তিগ্রস্থদের কাছ থেকে। বিশ্বের রপ্তানী পোশাক শিল্পে এতো বড় ভবন ধ্বসে শ্রমিকদের মৃত্যুকূপ একমাত্র বাংলাদেশেই সর্ব প্রথম। এই ভবন ধ্বসের ঘটনার পর সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন বিদেশী সংস্থাগুলো কিছু আর্থিক সাহায্য দিলেও এখনো ঠিকমতো তিপুরণ পাননি রানা প্লাজার সেসব তিগ্রস্তরা। এখনও নির্ধারিত হয়নি দূর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের তিপুরণের হার। ফলে তিপূরণ নিয়ে এখনো আশা-নিরাশায় দিন কাটাচ্ছেন তিগ্রস্তরা। শারীরিক পঙ্গুত্ব নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা ছাড়াও জীবনের নানা প্রয়োজন নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে এসব খেটে খাওয়া মানুষগুলো। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে আজ অসহায় তারা।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে গড়ে ওঠা ভবন রানা প্লাজাধসের কারণে রচিত হয় এক বেদনাদায়ক করুণ ইতিহাস। যেই ট্র্যাজেডির ছয় বছর পার হলেও আজও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মনে শিউরে ওঠে সেই দিনের সেই ভয়াবহ ভবনধসের ঘটনার কথা। হতাহত শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও নিখোঁজদের স্বজনরা প্রশ্ন তুলছেন নিখোঁজদের তালিকা নিয়ে। বিরামহীনভাবে টানা ২০ দিন উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর পর ঐ বছরেরই ১৩ মে অভিযান শেষ করে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নিয়োজিত উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও অনেক পরিবারই ফিরে পায়নি তাদের প্রিয় মানুষটিকে। ২১ দিনের উদ্ধারকাজের মধ্যে ১৭ দিন ঘটে বিস্ময়কর এক ঘটনা। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আর কাউকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব নয় ভেবে সাধারণ উদ্ধারকারীদের অনেকে যখন ঘরে ফিরছে তখনই প্রায় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২২ বছর বয়সী পোশাক শ্রমিক রেশমাকে। অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা রেশমা জানতো না দেশের ইতিহাসে এতো বড় ভবন ধ্বসের মধ্যে সে বেঁচে থাকবে। আজ কালের সাী হয়ে বেঁচে আছেন সেই এক মুঠো ভাতের সন্ধানে আসা এই গার্মেন্টস কর্মী রেশমা। জীবন পেলেন রেশমা। আর যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের কেউ ঐ ভয়ঙ্কর দিনের কথা ভেবে এখনও কাঁতরাচ্ছেন। পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে বেঁচে আছেন অনেকেই। কোন রকম খেয়ে পরে একটি পরিবারের ছায়াতলে থাকার আশা নিয়ে বেঁচে থাকলেও এসব আহত-নিহতদের অনেকে আজও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাননি। ধসের পর তিগ্রস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন অনেকের পাশাপাশি দেশ-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থাগুলো। যা ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা।
দিনটি ছিল বুধবার। প্রতিদিনের ন্যায় খেটে খাওয়া কর্মজীবি নারী-পুুরুষ বিশেষ করে এক মুঠো ভাতের সন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল তাদের কর্মস্থল একটি নিম্ন মানের ইটা-বালু-সিমেন্ট দিয়ে তৈরী ৮তলা অট্রালিকাটিতে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় ঐক্যজোটের হরতাল উপো করে সঠিক সময়ে কর্মে যোগদান, তাড়াহুড়া করে কোন রকম এক মুঠো ভাত হয়তো একটু নাশতা খেয়ে হুড়াহুড়ি করে প্রবেশ করলো সেই ভবনটিতে। এই ভবনের কয়েকটি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। ২০-দলীয় জোটের হরতাল কর্মসূচির কারণে ভোরে যে যার মতো করে নিজ নিজ অফিসে আসতে হয়েছে। বিরোধী দলের কর্মসূচির বিভিন্ন খবরা-খবর সংগ্রহ করতে ব্যস্ত ছিল সংবাদকর্মীরাও। সকালের নাশতা সেরে অফিসে ঢুকতেই খবর এলো ভবন ধসের। বহুতল ভবন ধসে পড়েছে ঢাকার অদূরে, সাভারে। ভবনের নাম রানা প্লাজা। মুহূর্তের মধ্যে স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রিিনক ও ওয়েবপোর্টাল অনলাইন সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে খবরটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। এ এক ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা। অফিসের সিদ্ধান্তে কিছু সময়ের মধ্যেই বিশেষ একটি টিম সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঢাকা থেকে সাভারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো সংবাদ কর্মীরা। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কয়েক মাইল আগে থেকেই চোখে পড়ল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কিছু সময়ের মধ্যেই পৌঁছলাম রানা প্লাজার সামনে। দেখলাম বাঁচা আর বাঁচানোর লড়াই। ভবন ও কারখানা মালিকদের অর্থলিপ্সার নির্মম শিকার পোশাক শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের অপোয় বসে থাকেনি সাধারণ মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসে খালি হাতেই অনেকে নেমে পড়েছেন উদ্ধার কাজে। প্রাণবাজি রেখে বহু পোশাক শ্রমিককে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনেন তারা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে এভাবেই নেমে এসেছিল ভয়াবহ এক পরিস্থিতি। আজ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তি ছয় বছর। ওই ভবন ধসে নিহত হয়েছিলেন এক হাজার ১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি। উদ্ধারকর্মীর কমতি না থাকলেও অনেক শ্রমিক চলে গেছে স্বজনদের কাঁদিয়ে। উদ্ধার করতে হয়েছে অনেক মৃতদেহ। অনেকের পরিচয় আজও জানা যায়নি। ডিএনএ পরীার মাধ্যমে কিছু লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হলেও এখনো অজ্ঞাত অনেকে। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় একে একে বেরিয়ে আসছে জীবিত ও মৃত পোশাক শ্রমিক। আহতদের ভর্তি করা হচ্ছে পাশের এনাম মেডিকেল কলেজে। আর নিহতদের রাখা হচ্ছে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সময় যত যাচ্ছে লাশের সারি ততই লম্বা হচ্ছে। নিকট আত্মীয়দের ভিড় বাড়ছে। তাদের কান্নার আওয়াজে অধরচন্দ্র মাঠ স্তব্ধ হয়ে উঠেছে। দিনের পর রাত এলো। এরপর আবার দিন। ধবংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের আশা শেষ হয়ে এলো। একের পর এক বের হতে থাকে মৃতদেহ, অনেকটা পচে গেছে। পচা মানুষের গন্ধ সাভারের আকাশে-বাতাসে মিশে যাচ্ছে। গন্ধ এড়াতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের বডি স্প্রেসহ রাসায়নিক স্প্রে। সেই গন্ধ আর মানুষ পচার গন্ধ এক হয়ে যায়। কোনো স্প্রের গন্ধ নাকে এলে মনে পড়ে যায় মানুষ পচা গন্ধ। মনে হয় যেন, বাতাসে লাশের গন্ধ পাচ্ছি।
সাভারের রানা প্লাজা ধসের ৭ বছরেও হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলায় কোন কুল কিনারা হয়নি। এজন্য আইনের জটিলতার কথা জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে প্রায় ৪ বছর আগে। এছাড়াও আদালতে রানার পরিবারসহ ৪১ আসামির বিরুদ্ধে ঝুলে আছে আরও ৩টি মামলা। তবে রাষ্ট্রপ আশা করছেন আগামী বছরের মধ্যে মামলাগুলো যথেষ্ট অগ্রগতি হবে। এ ঘটনায় বিপুল শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুটি মামলায় এখনো শুরু হয়নি স্যা গ্রহণ। এতে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতগুলো শুরু করতে পারেননি বিচারকাজ। আদালতের নথি ঘেঁটে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসের সময়ে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় গত বছর। ওই বছরের ১৫ মার্চ ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহজাদী তাহমিদা মামলা দুটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং বিচারিক আদালতে বদলির আদেশ দেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুন ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে বজলুস সামাদ আদনানসহ তিন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি আবেদন করেন।
সহ¯্রাধিক শ্রমিকদের এতো বড় বড় বিপর্যের বিচার প্রক্রিয়াধীন থাকলেও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে এর সমাধান জরুরী প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ঢাকার সাভারে ইতিহাসের ভয়াবহতম রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত আইনে দায়ের করা দু’টি মামলার নথি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। মামলা দু’টি বিচারের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে আটক আসামিসহ মামলার সকল আসামিকে আগামী ২৮ এপ্রিল আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে জানতে পারলাম ২৮ এপ্রিল আসামিদের উপস্থিতি ছাড়াও মামলা বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করবেন আদালত। এরপর মামলাটি চার্জ গঠনের জন্য দিন ধার্য করা হবে। চার্জের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ভয়াবহতম রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার দু’টির বিচার। নথি প্রস্তুত হলেও মামলার ৪১ আসামির মধ্যে এখনও ১২ আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটির রাষ্ট্রপরে কৌসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান, মামলা দু’টিতে ৬ জন আসামি কারাগারে আটক আছেন। ২৩ আসামি জামিনে আছেন। বাকি ১২ আসামি পলাতক। ২৮ এপ্রিল মামলাটি আমলে গ্রহণ ও পরবর্তী তারিখে চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলা দু’টির বিচার শুরু হবে। আসামিদের মধ্যে ১২ সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। মামলা দু’টির মধ্যে হত্যা মামলাটি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দুই মামলার সাীর সংখ্যা ৭২৯ জন। সাীদের মধ্যে রয়েছেন নিহতদের স্বজনদের জবানবন্দি, জীবিত উদ্ধারকৃতদের জবানবন্দি, বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের জবানবন্দি, উদ্ধারকর্মীদের জবানবন্দি, বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ ও তাদের জবানবন্দি, রানা প্লাজার বাণিজ্যিক ভবনে গার্মেন্টস কারখানা স্থাপনে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও দায়িত্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়া নির্ণয়, নকশা অনুমোদনকারীদের জবানবন্দি, নিরপে সাী ও মিডিয়া কর্মী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ইতিহাসের ভয়াবহতম রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এইচআরডাব্লিউ বলছে, রানা প্লাজার পোশাক কারখানাগুলোতে যদি শ্রমিক ইউনিয়ন থাকত, তাহলে হতাহতের সংখ্যা অনেক কম হতো। এই সংসস্থার এক প্রতিবেদনে জানায়, রানা প্লাজার কোনো পোশাক কারখানাতেই নাকি শ্রমিক ইউনিয়ন ছিল না। তাদের কথায়, যদি ঐ সব কারখানায় শ্রমিকদের সংগঠন থাকত, তাহলে ফাটল দেখা দেয়ার পরও জোর করে পোশাক শ্রমিকদের সেখানে কাজ করানো যেত না। আর তেমনটা হলে ভবন ধসে পড়লেও শ্রমিকরা সেখানে থাকতেন না, অর্থাৎ এত প্রাণহানি ঘটত না। এইচআরডাব্লিউ-র অভিযোগ, ‘‘রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর পরও বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিক সংগঠন করতে গিয়ে দমনপীড়নের, এমনকি কারখানার প থেকে হুমকিরও শিকার হচ্ছেন।” ইউনিয়ন করার চেষ্টা করায় শ্রমিকদের শারীরিক নির্যাতন, ভয় দেখানো ও হুমকি, মিথ্যা অভিযোগসহ অনেকভাবে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে এইচআরডাব্লিউ। তার ওপর সরকারও এ সবের জন্য গার্মেন্ট কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদপে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এইচআরডাব্লিউ-র কথায়, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পর শ্রম আইন সংস্কারের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ)প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। অথচ এখনও বাংলাদেশে শ্রমিক ইউনিয়ন করার ব্যাপারে কঠোর নীতিমালা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।” তারা জানায়, বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার গার্মেন্ট কারখানার মধ্যে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ কারখানায় নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। তাই শ্রমিক সংগঠন করার ব্যাপারে আইনি ও বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করার পদপে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি। রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় আহতদের নামে বিদেশ থেকে বিভিন্ন এনজিও ও গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন আর্থিক সহায়তা আনলেও তা তিগ্রস্ত শ্রমিকরা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা। এসময় রানা প্লাজার মালিকের বিচার দ্রুত শেষ করারও দাবি জানানো হয়। এইচআরডাব্লিউ-র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফিল রবার্টসন প্রতিবেদনে বলেন, ‘স্বাধীন শ্রমিক সংগঠনে বাধা দেওয়ার প্রবণতা শ্রমিক ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপর হুমকিস্বরূপ। নিবন্ধিত ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার চর্চার সুযোগ দেওয়া এবং এ সব ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া গার্মেন্ট মালিকদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।’ আর এই কোভিড-১৯ মহামারী করোনাভাইরাসে সারাদেশ যখন অচল অবস্থা অব্যাহত।ঠিক এই সময় মহা সঙ্কটে পড়েছে খেটে খাওয়া পোশাক শ্রমিকেরা। যদিও পোশাক শিল্পের বিভিন্ন সংগঠন তাদের মানবিক চিন্তা বিবেচনা করে প্রায় অর্ধেক গার্মেন্ট শিল্পের মালিকেরা বেতন ধাপে ধাপে শ্রমিকদের মজুরিসহ বেতনভাতাদি দিচ্ছে। তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে অন্তত কিছুটা হলেও রানা প্লাজায় বেঁচে থাকা শ্রমিকরা কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতে পারে।
লেখক, গবেষক, সাংবাদিক
e-mail: azamanrahat@gmail.com