মানুষের জীবনে দারিদ্র্য ও গুনাহ—এই দুইটি বড় সংকট। দারিদ্র্য মানুষকে দুর্বল করে, আর গুনাহ তাকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ইসলাম এমন কিছু আমল শিখিয়েছে, যা মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করে, রিজিক বৃদ্ধি করে এবং গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করে। এসব আমল শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতিই আনে না; বরং মানুষের জীবনে বরকত ও সমৃদ্ধি এনে দেয়। বিশেষভাবে ওমরাহ এমন এক ইবাদত, যা মানুষের আত্মাকে ধুয়ে-মুছে পবিত্র করে এবং দারিদ্র্য দূর করার গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে কুরআন-সুন্নাহতে প্রশংসিত হয়েছে।
হাদিস: ওমরাহ দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
عَلَيْكُمْ بِالْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ.
অর্থ:
‘ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরাহ করে যেতে থাকো। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে; যেমন আগুনের হাঁপার লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে। আর মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’
(সুনানে নাসাঈ: ২৬৩১, তিরমিজি: ৮১০)
কখন ওমরাহ করা যায়
বছরে পাঁচ দিন ছাড়া সারা বছরই ওমরাহ আদায় করা যায়। ওই পাঁচ দিন হলো হিজরি ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। এ দিনগুলোতে ওমরাহ করা মাকরুহ তাহরিমি। এ ছাড়া বছরের বাকি সময় ওমরাহ করা জায়েজ ও সওয়াবের কাজ।
বিশেষত রমজানে ওমরাহ করার রয়েছে বিশেষ ফজিলত। হাদিসে এসেছে—
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
فَإِذَا كَانَ رَمَضَانُ اعْتَمِرِي فِيهِ فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ حَجَّةٌ
অর্থ:
‘রমজানের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’
(সহিহ বুখারি: ১৭৮২)
ওমরাহ জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ
মক্কায় পৌঁছার সামর্থ্য য whose আছে, তার জন্য জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সামর্থ্য অনুযায়ী বারবার ওমরাহ করা মুস্তাহাব ও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন—
‘এক ওমরাহর পর অন্য ওমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের জন্য কাফফারা। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত।’
(সহিহ বুখারি: ১৭৭৩)
ওমরাহ কেন দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে
১. হৃদয়কে গুনাহ থেকে শুদ্ধ করে
ওমরাহ মানুষকে তাওবার দিকে ফিরিয়ে আনে। তাওবা গুনাহ ধুয়ে দেয় এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করার শক্তি দেয়।
২. আল্লাহর ওপর ভরসা বৃদ্ধি করে
যখন একজন মুমিন আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করে, আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দান করেন।
৩. আল্লাহর ঘরে আগমন দারিদ্র্য দূর করার দ্বার
হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—ওমরাহ দারিদ্র্যকে এমনভাবে দূর করে, যেমন আগুনে লোহা ও সোনার ময়লা দূর হয়।
৪. মাবরুর হজের পুরস্কার জান্নাত
হজ মানুষের জীবনকে আমূল বদলে দেয়। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্ত করে দেন।
হজ ও ওমরাহ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়; বরং এটি দারিদ্র্য, গুনাহ এবং জীবনের নানা দুর্দশা থেকে মুক্তির মহাঔষধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই এই ইবাদতের শক্তি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিত নেক আমল ও ইবাদতে অবিচল থাকবে, আল্লাহ তাআলা তার রিজিক প্রশস্ত করবেন, গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হজ ও ওমরাহ আদায়ের তাওফিক দান করুন এবং এর বরকতে জীবনের সব দুশ্চিন্তা, দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দিন—আমিন।

