নামাজ ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর একটি। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করা একজন মুসলমানের ওপর ফরজ দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন—
“নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩)
যারা সময়মতো নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি সেগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং অবহেলা করবে না, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে তা অবহেলা করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই—ইচ্ছা করলে শাস্তি দেবেন, আর ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৪২০)
নামাজের জন্য প্রয়োজন পবিত্র জায়গা। রাসুল (সা.) বলেছেন—
“সমস্ত পৃথিবী আমার উম্মতের জন্য পবিত্র ও মসজিদরূপে করা হয়েছে।” (বুখারি, হাদিস: ২৯৭৭)
অর্থাৎ, পৃথিবীর যেকোনো পরিষ্কার জায়গায় নামাজ আদায় করা যায়। তবে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে নামাজ পড়া ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।
যে সাত স্থানে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাত স্থানে নামাজ পড়া নিষেধ করেছেন। সেগুলো হলো—
১️⃣ আবর্জনার স্থান,
২️⃣ জবাইখানা,
৩️⃣ কবরস্থান,
৪️⃣ পথঘাট,
৫️⃣ টয়লেট বা বাথরুম,
৬️⃣ উটের খোঁয়াড় বা গোয়ালঘর,
৭️⃣ কাবা শরিফের ছাদ।
(তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
আরেক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন— “সমস্ত জমিন নামাজের জায়গা, তবে কবরস্থান ও বাথরুম ব্যতীত।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯২)
উটের খোঁয়াড়ে নামাজ কেন নিষিদ্ধ
আল-বারা ইবনে আজিব (রা.) বর্ণনা করেন— নবী করিম (সা.)-কে যখন উটের খোঁয়াড়ে নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন—
“উট যেখানে বাঁধা থাকে সেখানে নামাজ পড়ো না, কারণ সেখানে শয়তান অবস্থান করে।”
তবে ভেড়া বা ছাগলের খোঁয়াড়ে নামাজ পড়া বৈধ— কারণ সেটি বরকতপূর্ণ স্থান। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৩)
আল্লাহর শাস্তিপ্রাপ্ত জাতির এলাকায় নামাজের বিধান
যে স্থানগুলোতে অতীত জাতির ওপর আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়েছিল, সেখানে নামাজ পড়া হারাম। হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে, তাদের বাসস্থানে কান্নাকাটি ছাড়া প্রবেশ করো না। যদি না কাঁদতে পারো, তাহলে সেখানে যেয়ো না, নইলে তোমাদের ওপরও তাদের মতো শাস্তি নেমে আসবে।” (বুখারি, হাদিস: ৪৩৩)
ইবনে ওমর (রা.) আরো বলেন— নবী (সা.) যখন সামুদ জাতির ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় পৌঁছান, তিনি মাথা ঢেকে দ্রুত সেই উপত্যকা অতিক্রম করেন এবং বলেন—
“এখানে নামাজ আদায় করো না, কারণ এটি শাস্তিপ্রাপ্ত জাতির ভূমি।” (বুখারি, হাদিস: ৪৪১৯)
ইমাম নওয়াবি (রহ.) বলেন, এ বিষয়ে আলেমদের একমত— শাস্তিপ্রাপ্ত জাতির স্থানে নামাজ পড়া হারাম।
পথে বা ব্যস্ত সড়কে নামাজের বিধান
চলাচলরত মানুষের পথ বা ব্যস্ত রাস্তায় নামাজ আদায় করা মাকরুহ, কারণ এতে অন্যদের অসুবিধা হয়। তবে যদি এমন জায়গায় নামাজ পড়া হয় যেখানে কাউকে বিঘ্নিত করা হয় না, বা প্রয়োজনবশত (যেমন জুমা বা ঈদের সময় জায়গার অভাবে) রাস্তার পাশে নামাজ পড়া হয়, তাহলে তা জায়েজ।
রাসুল (সা.) বলেছেন—
“পথে বসতে সাবধান থাকো।” সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো আলাপের জন্য পথেই বসি।’
তিনি বলেন, “যদি বসতেই হয়, তবে পথের অধিকার আদায় করো।”
সাহাবিরা জানতে চান, ‘পথের অধিকার কী?’
রাসুল (সা.) বলেন, “চোখ নিচু রাখা, কারও ক্ষতি না করা, সালাম ফিরিয়ে দেওয়া, সৎ কাজে উৎসাহ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা।” (বুখারি, হাদিস: ৬২২৯)

