জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন খুনের ১৮ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি। তিনি ‘প্রেমঘটিত কারণে’ খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
সহপাঠী ও পুলিশের তথ্যমতে, ভবনটির একটি বাসায় উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রীকে পড়াতেন জোবায়েদ। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বংশাল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জোবায়েদের পরিবার বলছে, তারা গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে মামলা দায়ের চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ মামলা করতে পারেনি।
জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমরা ছাত্রীসহ ছয়জনের নামে মামলা দিতে চেয়েছি। কিন্তু বংশাল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এতজনের নামে মামলা না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এতজনের নামে মামলা দিলে হালকা হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা নিতে আমরা প্রস্তুত। পরিবার যাঁদের নামে মামলা দিতে চায়, আমরা মামলা নেব। পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি।’ বংশাল থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রীকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, এক বছর ধরে তাঁকে পড়াচ্ছিলেন জোবায়েদ। তাঁকে পছন্দ করতেন ছাত্রী। এ কথা একপর্যায়ে জেনে যান তাঁর ‘বয়ফ্রেন্ড’। তখন ছাত্রী তাঁর ‘বয়ফ্রেন্ডের’ সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এতে ‘বয়ফ্রেন্ড’ ক্ষিপ্ত হয়ে গতকাল বিকেলে ভবনটির তিনতলায় জোবায়েদকে খুন করেন। এই তরুণ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তিনি আরমানিটোলাতেই থাকেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জোবায়েদ হত্যায় আরও দু-একজন জড়িত থাকতে পারেন। কারণ, সিসিটিভির ফুটেজে ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন দুজনকে পালাতে দেখা গেছে।
জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। মামলা নিয়ে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’
হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার মোড়, জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা রাতভর অবস্থান করে সকালে ফিরে আসেন।