অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। তার জন্য যা যা করতে হয়, সাধ্য অনুযায়ী আমরা সব কিছু করব। এর সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকে দেওয়া সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচন করে দেওয়া।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখরভাবে শুক্রবার আমরা সেখানে যাব (জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে) এবং দলিলে সই করব। জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরও বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত হবে। কাজেই সেইভাবে আমরা আগাব, যাতে এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নানা জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করব এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটাকে সঞ্চারিত করা আরেক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করব। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমুল্য সম্পদ। এইগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এজন্য আজকে জুলাই সনদ রচিত হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটা একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড। মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি, যে এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যেই অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন এটা যুগযুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসের স্বর্ণ অক্ষরে লিখে রাখার মতো একটা দিন।’
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এর আগে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলের বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।