জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা উন্নত জেনেটিক কৌশল ব্যবহার করে ছত্রাকের বিবর্তনের নতুন তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, প্রাচীন ছত্রাক কেবল নিষ্ক্রিয় জীব ছিল না, বরং তারা সক্রিয়ভাবে প্রাচীনতম স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের গঠনে প্রভাব ফেলেছিল। উদ্ভিদ নয়, ছত্রাকই ছিল পৃথিবীর প্রথম স্থল উপনিবেশ স্থাপনকারী। অনেক বছর ধরেই উদ্ভিদকে পৃথিবীর স্থলভাগের প্রথম উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদের শিকড় হওয়ার বহু আগে থেকেই ছত্রাক স্থলজ বাস্তুতন্ত্র শাসন করত। এর ফলে ছত্রাক প্রাথমিক পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রাচীন পৃথিবীর মূল বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ছত্রাক প্রাণ বিকাশের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
গবেষণার তথ্যমতে, বন ও স্থলজ উদ্ভিদের উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। ছত্রাক যুগ যুগ ধরে বাস্তুতন্ত্রের বিকাশ ঘটায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উদ্ভিদের বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন ছত্রাক জলবায়ু, মাটির উর্বরতা ও অগণিত জীবের বিবর্তনকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছিল, যা এত দিন কল্পনাও করা হয়নি। অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের তুলনায় ছত্রাকের আদি তারিখ বা সময় নির্ধারণ করা বেশ কঠিন।
গবেষণার তথ্যমতে, ছত্রাকের পূর্বপুরুষ প্রায় ৯০ লাখ বছর থেকে ১৪০ কোটি বছর আগে বিদ্যমান ছিল। আর প্রথম স্থলজ উদ্ভিদ প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ বছর আগে আবির্ভূত হয়। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ছত্রাক সম্ভবত জলজ পরিবেশে ও স্যাঁতসেঁতে উপকূলরেখা বরাবর বৈচিত্র্য তৈরি করেছিল। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লেনার্ড সানথো বলেন, ছত্রাক বাস্তুতন্ত্র চালায়। পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করে, মিথজীবী সম্পর্ক তৈরি করে এবং কখনো কখনো রোগ সৃষ্টি করে। ছত্রাক উদ্ভিদ জন্মানোর বহু আগে থেকেই পরিবেশগত ভূমিকা রাখছে। ছত্রাক হলো প্রকৃতির রাসায়নিক জাদুকর। ছত্রাক শিলা ক্ষয় করে, ফসফরাস মুক্ত করে এবং পুষ্টি স্থানান্তর করে। এই প্রক্রিয়া কঠিন স্থলজ পরিবেশকে নরম করেছিল।