রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের শীর্ষ তিন পদ ভিপি, জিএস ও এজিএসের বাইরে আরও কিছু পদে ‘তীব্র লড়াই’ লড়াই হতে পারে। এসব পদের মধ্যে তিনটি সম্পাদকের পদে চারজন করে প্রার্থী বেশি আলোচনায় রয়েছেন। পদগুলো হলো ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক এবং বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই তিন সম্পাদক পদে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের অনেকেই ক্যাম্পাসে আলোচিত ও পরিচিত মুখ। ফলে নির্বাচনে জিতে শেষ হাসি কোন তিনজন হাসবেন, তা এখনই বলা কঠিন।
পোষ্য কোটা ইস্যুসহ নানা কারণে তিনবার পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। রাকসুতে মোট পদ ২৩টি। এর মধ্যে ৮টি সম্পাদক, ৮টি সহসম্পাদক ও চারটি কার্যকরী পদ রয়েছে। রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া ১৭টি হলে হল সংসদে ১৫টি করে পদে মোট প্রার্থী ৫৯৭ জন। মোট ভোটার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১।
ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক
রাকসুতে শীর্ষ তিন পদের পরের পদটি হচ্ছে ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট নয়জন। এর মধ্যে অন্তত চারজনের মধ্যে লড়াই হবে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁরা হলেন মোছা. নার্গিস খাতুন, শীত কুমার উরাং, মো. হামিদুল্লাহ নাঈম ও মো. ইয়াসিন আরাফাত বিজয়।
তাঁদের মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে আছেন মোছা. নার্গিস খাতুন। তিনি জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। ক্যাম্পাসে তাঁর বেশ পরিচিতি। নার্গিস ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে লড়াই করছেন।
শীত কুমার উরাং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ থেকে। তিনি একজন সংগ্রামী মানুষ। তিনি চা-শ্রমিক ছিলেন। ভালো ফুটবলার হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে লড়ছেন মো. হামিদুল্লাহ নাঈম। ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে লড়াই করায় অনেকে তাঁকে এগিয়ে রাখছেন। এ ছাড়া ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে লড়াই করছেন মো. ইয়াসিন আরাফাত বিজয়। তাঁকে নিয়েও ক্যাম্পাসে আলোচনা হচ্ছে। সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক
রাকসুর পদক্রম অনুযায়ী ৫ নম্বর পদ হচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ প্রার্থী। এই পদের প্রার্থীরা প্রচারে নানা কৌশল ব্যবহার করে ভোটের মাঠে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। কেউ শুধু গান গেয়ে, কেউ গম্ভীরা গান গেয়ে, কেউ নবাব সিরাজউদ্দৌলা সেজে কিংবা কেউ পুলিশ সেজে প্রচার চালাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই পদের প্রার্থীরা নিজেদের নানান প্রতিভা ও অভিনয় দেখিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে শেষ পর্যন্ত লড়াই হতে পারে চারজনের মধ্যে। তাঁরা হলেন কাজী শফিউল কালাম (কে এস কে হৃদয়), জায়িদ হাসান জোহা, মো. আবদুল্লাহ আল কাফী এবং আনোয়ার আমজাদ (সজল)।
তাঁদের মধ্যে কাজী শফিউল কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন। তিনি ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ নামের একটি গানের দলের পরিচালক। তিনি গান গেয়ে ভোট চেয়ে আলোচনায় রয়েছেন।
শিবির–সমর্থিত প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জায়িদ হাসান জোহা। তিনি ভোটের মাঠে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তৎপর। তিনি প্রচারে পুলিশ ও গম্ভীরা গানের চরিত্রে অভিনয় করে ভোট চেয়েছেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা সেজে ভোটের মাঠে হইচই ফেলেছেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মো. আবদুল্লাহ আল কাফী। তিনিও অনলাইনে বেশ সরব রয়েছেন। এ ছাড়া গলায় দোতারা ঝুলিয়ে ও গান গেয়ে ক্যাম্পাসে ভোট চেয়ে আলোচনায় রয়েছেন আনোয়ার আমজাদ। তিনি বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে পরিচিত।
আবদুল্লাহ আল কাফী বলেন, ‘এই পদের প্রায় সবাই যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী। আমার মতে, এই পদেই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বহুমুখী সংস্কৃতিমনা প্রার্থীকে বেছে নেবে।’