সারা বিশ্বের রাতের আকাশে কয়েক মাস ধরেই নতুন এক আলোকিত নজরকাড়া দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করার কারণে জ্বলন্ত উল্কার মতো পুড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, বিভিন্ন স্যাটেলাইটের ব্যবহার শেষে তারা এভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। প্রতিদিন পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট প্রবেশ করছে। বিজ্ঞানীরা এমন পুনঃপ্রবেশের কারণে পরিবেশগত ও বায়ুমণ্ডলের সুরক্ষায় সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন। কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর চারপাশে হাজার হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করছে। এসব স্যাটেলাইট অকেজো বা কাজ শেষে পুনঃপ্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে।
স্পেসএক্সের স্টারলিংক কর্মসূচিতে বর্তমানে নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে ছয় হাজারের বেশি সক্রিয় স্যাটেলাইট কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট দেওয়ার জন্য স্টারলিংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতি মাসেই যেমন নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে, তেমনি প্রতি মাসেই কক্ষপথ থেকে স্যাটেলাইট অপসারণ করা হচ্ছে। পুরোনো বা ত্রুটিপূর্ণ স্যাটেলাইট দ্রুত প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডাওয়েলের মতে, প্রতিদিন চারটির মতো স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করছে। প্রবেশের সময় স্যাটেলাইট পুড়ে যাচ্ছে। একেকটি স্যাটেলাইট প্রায় পাঁচ বছর পরিচালনার পর নিরাপদে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পুনঃপ্রবেশের সময় সম্পূর্ণরূপে বিচূর্ণ হয়, এমনভাবে নকশা করা হয়।
বিভিন্ন স্যাটেলাইট যখন কক্ষপথ থেকে সরে আসে, তখন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে তা উত্তপ্ত হয়ে বিচূর্ণ হয়ে যায়। তখন উল্কা বা মেরুজ্যোতির মতো উজ্জ্বল আলোর রেখা সৃষ্টি করে। সৌখিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপানজুড়ে এমন জ্বলন্ত দৃশ্যের অসংখ্য ভিডিও রেকর্ড করেছেন।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এমন পুনঃপ্রবেশের হার আধুনিক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি ও প্রতিস্থাপনের চক্রকে প্রতিফলিত করে। কক্ষপথে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। স্যাটেলাইটের পুনঃপ্রবেশের ফলে পৃথিবীর উচ্চ বায়ুমণ্ডলের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ক্রমেই শঙ্কিত। যখন স্যাটেলাইট পুড়ে যায়, তখন অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের মতো সূক্ষ্ম ধাতব কণা নির্গত হয়। এতে ওজোনস্তরে ক্ষতি হয়। এসব কণা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারে। কিছু গবেষক সতর্ক করে বলেন, আরও কয়েক হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব স্যাটেলাইট মেসোস্ফিয়ারের গঠন পরিবর্তন করতে পারে।