পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের জন্য অক্সিজেনের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন না থাকলে পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে যাবে। তবে অক্সিজেনের অণু একই সঙ্গে আমাদের জীবনধারণের জন্য বন্ধু ও কোষের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে কাজ করে। নতুন এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সেই প্রক্রিয়া উন্মোচন করেছেন। অক্সিজেন নানাভাবে তার বন্ধুত্বপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক রূপের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়।
বিজ্ঞানীরা একই অক্সিজেন অণুর দুটি ভিন্ন স্পিন অবস্থাকে আলাদা করার জন্য সিঙ্গলেট অক্সিজেন ও ট্রিপলেট অক্সিজেনের কথা জানিয়েছেন। ট্রিপলেট অক্সিজেন শান্ত ও স্থিতিশীল রূপ, যা আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি। আর সিঙ্গলেট অক্সিজেন অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল ও ক্ষণস্থায়ী রূপ। এটি কোষ ও ব্যাটারির উপাদানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। এই সিঙ্গলেট অক্সিজেনের পূর্বসূরি সুপার অক্সাইড। এটি একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রনসহ অক্সিজেন। যখন দুটি সুপার অক্সাইড একত্র হয়, তখন ডিসপ্রোপোরশনেশন প্রক্রিয়ায় একটি পার অক্সাইডে ও অন্যটি অক্সিজেন গ্যাসে পরিণত হয়। অস্ট্রিয়ার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা কোন পরিস্থিতিতে ট্রিপলেট অক্সিজেন প্রভাবশালী থাকবে ও কখন ক্ষতিকারক সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরি হয়, তা বের করেছেন। এ পরিবর্তনের মূল নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান বিক্রিয়ার চালিকা শক্তি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যখন চালিকা শক্তি বাড়তে থাকে, তখন ট্রিপলেট অক্সিজেন তৈরির গতি প্রথমে বাড়ে, তারপর অপ্রত্যাশিতভাবে কমতে শুরু করে। এ গতি কমে যাওয়ার ফলেই সিঙ্গলেট অক্সিজেন দ্রুত তৈরি হয়। উচ্চ চালিকা শক্তিতে বিক্রিয়ার এই বিপরীতধর্মী মন্থরতা মার্কাস তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যায়। এই তত্ত্ব অনুসারে, বিক্রিয়ায় ধাক্কা খুব বেশি বেড়ে গেলে বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ার স্বাভাবিক অঞ্চলের পরে একটি ওলটানো অঞ্চলে প্রবেশ করে, যেখানে গতি কম হয়। এ গবেষণা প্রমাণ করে চালিকা শক্তি কমিয়ে বা মাধ্যমের পুনঃসংগঠন শক্তি বাড়িয়ে তুললে নিরাপদ ট্রিপলেট অক্সিজেনের পথ তৈরি করা যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাণী কোষের পিএইচ অক্সিজেনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী স্টেফ্যান এ ফ্রুনবার্গার বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না খারাপ সিঙ্গলেট অক্সিজেন কীভাবে তৈরি হয়। কোষের অভ্যন্তরে পিএইচ বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন হয়। লাইসোসোম অ্যাসিডিক আর মাইটোকন্ড্রিয়া সামান্য ক্ষারীয় হয়। পিএইচয়ের এ পরিবর্তন সুপার অক্সাইড বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী চালিকা শক্তিকে স্থানান্তর করে মাইটোকন্ড্রিয়াতে উচ্চ পিএইচ চালিকা শক্তিকে কম রাখে। সেখানে সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরি হতে বাধা পায়। বিপরীতে অ্যাসিডিক অঙ্গাণুতে সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। পিএইচয়ের ছোট পরিবর্তন বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে সিঙ্গলেট অক্সিজেনের প্রভাব দেখা যায়। অক্সিজেন ব্যাটারি চার্জ ও ডিসচার্জের সময় সুপার অক্সাইড ও পার অক্সাইড তৈরি করে। বিভিন্ন ডিভাইসে সিঙ্গলেট অক্সিজেনকে প্যারাসাইটিক বিক্রিয়ার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ধরনের অক্সিজেন ইলেকট্রোলাইট ক্ষয় করে। কিছু ইলেকট্রোলাইট ও লবণের ব্যবহার সিঙ্গলেট অক্সিজেন নির্গমনের সম্ভাবনা বাড়াতে বা কমাতে পারে। অক্সিজেনের বহুরূপী এ আচরণের নিয়ে এ গবেষণা ফলাফল নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম