জনপ্রিয় বাংলা গান ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি’ গুনগুন করে গেয়েছেন অনেকেই। গানের কথার মতো সামনে থাকা মানুষের চোখে চোখ পড়লে আমরা নানা রঙের চোখ দেখি। চোখের রং আসলে মেলানিন, আইরিসের গঠন ও জেনেটিকসের মাধ্যমে তৈরি হয়। আর তাই তো আশপাশে থাকা মানুষের মধ্যে বাদামি থেকে শুরু করে নীল রঙের চোখ দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে বাদামি চোখের আধিপত্য থাকলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের চোখের রং কালো হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে গভীর বাদামি থেকে শুরু করে হিমশীতল নীল, সবুজ বা পরিবর্তনশীল হেজেল শেডের চোখের রং দেখা যায়। চোখের আইরিস বা চোখের মণির চারপাশের রঙিন বলয় মূলত আমাদের চোখের রং নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। এর পিগমেন্ট মেলানিন আলো শোষণ করে এবং রঙের গভীরতা নির্ধারণ করে। বাদামি চোখে মেলানিনের ঘনত্ব বেশি থাকে, যা বেশি আলো শোষণ করে গাঢ় রূপ দেয়। নীল চোখে মেলানিন খুব কম থাকে। নীল চোখের রং কোনো পিগমেন্ট থেকে আসে না। আইরিসের মধ্যে থাকা আলোর বিচ্ছুরণ থেকে আসে। সবুজ চোখে মেলানিন ও আলোর বিচ্ছুরণের ভারসাম্য থাকে। হেজেল শেডের চোখে মেলানিনের অসম বণ্টন দেখা যায়। আলোর তারতম্যের সঙ্গে সেই চোখে পরিবর্তনশীল আলাদা নকশা তৈরি হয়।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, একটি জিনের কারণে চোখের রং ভিন্ন দেখা যায়। নতুন এক গবেষণা বলছে, একাধিক জিন চোখের রংকে প্রভাবিত করে। এ কারণে ভাইবোনদের চোখের রং ভিন্ন হতে পারে। আবার দুই নীল চোখের মা–বাবার সবুজ বা বাদামি চোখের সন্তান হতে পারে। চোখের রং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত শিশুরা জন্মের সময় প্রায়ই নীল বা ধূসর চোখ নিয়ে জন্মায়। তাদের মেলানিনের মাত্রা তখন কম থাকে। প্রথম কয়েক বছরে পিগমেন্ট জমা হলে পরবর্তী সময়ে তাদের চোখ সবুজ, হেজেল বা বাদামিতে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের চোখের রং সাধারণত স্থিতিশীল থাকে।
চোখের রং স্থির নয়; বরং গতিশীল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। বাদামি চোখে সোনালি আভা, হেজেল চোখে সবুজাভ আন্ডারটোন বা নীল চোখে ধূসর–নীল আভা পারিপার্শ্বিক আলো, কোণ ও আশপাশের রঙের ওপর নির্ভর করে ভিন্নভাবে তৈরি হয়। এই বৈচিত্র্য ঘটে আইরিসের গঠন ও মেলানিনের সঙ্গে জটিল উপায়ে আলোর মিথস্ক্রিয়ার কারণে।