সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে “কৃষি মন্ত্রণালয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিনব উদ্যোগ” ও “সার আমদানিতে নজিরবিহীন দুর্নীতি” শিরোনামে প্রকাশিত খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকার ইতোমধ্যেই সার আমদানিতে স্বচ্ছ ও সর্বনিম্ন দর নিশ্চিতের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সাশ্রয় করেছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আগে একই দেশের একই সারের জন্য একাধিক দরদাতা ভিন্ন ভিন্ন দরে সরবরাহের সুযোগ পেত। এতে সরকারকে টনপ্রতি ২০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত গুনতে হতো। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। গত ১৯ আগস্ট প্রথম ধাপে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন সার সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপে আরও ৬ প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত সরকারি দরে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন সার সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়, আগের নিয়মে টেন্ডারে একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার কারণে টনপ্রতি ২০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বেশি দামে সার কিনতে হতো। এতে সরকারের বিপুল অর্থ অপচয় হতো। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন কেবল সর্বনিম্ন দরে সম্মত প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টন টিএসপি, ২ লাখ ৫৫ হাজার টন ডিএপি এবং ৯০ হাজার টন এমওপি সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরে আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একই মূল্যে অতিরিক্ত ৯০ হাজার টন টিএসপি ও ১ লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি আমদানির কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, কার্যাদেশ যাচাই করলেই দেখা যাবে যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সারের জন্য সবার কাছে একই দরে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুটি সাপ্তাহিক বুলেটিন—আরগুস ও ফার্টিকন—এ প্রকাশিত দরের ভিত্তিতে সার আমদানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একই ধরনের সার একই দেশের ক্ষেত্রে কেবল এক দরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন ভিন্ন দরে চুক্তি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য।
তবে মন্ত্রণালয় বলছে, জাহাজ ভাড়া, ডিসচার্জ খরচ ও স্থানীয় পরিবহন ব্যয়ের কারণে দেশভেদে দামের পার্থক্য থাকতে পারে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম, কোনো ধরনের অনিয়ম নয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির (জি-টু-জি) আওতাতেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) দীর্ঘদিন ধরে একই নিয়মে সার আমদানি করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করে, সরকারের স্বচ্ছ পদক্ষেপে সিন্ডিকেটের অসাধু লাভের পথ রুদ্ধ হওয়ায় একটি মহল অপপ্রচারে নেমেছে। তথ্য যাচাই না করে সংবাদ প্রকাশ করা নিতান্তই দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে যে কোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়।
কৃষি মন্ত্রণালয় সংবাদ প্রচারে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গণমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছে।