চুল থেকে হাঁটাচলার স্টাইল, লম্বা রানআপ, ডেলিভারি ‘স্ট্রাইড’ ও উইকেট উদ্যাপন—সবকিছুতেই পাকিস্তান কিংবদন্তি শোয়েব আখতারের সঙ্গে মিল তাঁর।
ক্রিকেটপ্রেমীরা আজ তাঁকে দেখার পর আরও অবাক হতে পারেন। কারণ, শোয়েবের ‘কার্বন কপি’ মুহাম্মদ ইমরান ওমানের জার্সিতে প্রথমবারের মতো খেলবেন জন্মভূমি পাকিস্তানের বিপক্ষে!
শুধু ইমরানই নন, তাঁর মতো আরও দশজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার আছেন ওমানের এশিয়া কাপ স্কোয়াডে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আছেন ছয়জন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গিয়ে থিতু হওয়ায় ওমান বহু ভাষাভাষীর দলও হয়ে উঠেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ক্রিকেটের নিবিড় সম্পর্ক নেই। উপমহাদেশ থেকে যাওয়া প্রবাসীরা খেলাটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁরাই ওমানকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
পাথুরে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা দেশটির মানুষদের প্রেম–ভালোবাসা ফুটবল ঘিরে। কারণটাও অনুমেয়। চাইলেই বুট পরে সমতল পাথুরে জমিতে ইচ্ছেমতো ফুটবল খেলা যায়। কিন্তু ঊষর পাথুরে ভূখণ্ডের যেকোনো জায়গায় চাইলেই তো আর ক্রিকেট খেলা সম্ভব নয়। রাজধানী মাসকাটের আল আমেরাত গ্রাউন্ডই একমাত্র আন্তর্জাতিক ভেন্যু, যেটিকে ঘিরে দেশটির ক্রিকেট আবর্তিত হচ্ছে। অথচ ফুটবলপাগল দেশ হয়েও কখনো ফিফা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ওমান। কিন্তু ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে ছিল তিন–তিনবার (২০১৬, ২০২১ ও ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)। দেশটি ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সহ–আয়োজকও ছিল।
আরও চমকে দেওয়ার মতো তথ্য হতে পারে এটি—দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপে অভিষেক হচ্ছে ওমানের। মানে, মহাদেশীয় প্রতিযোগিতার আগে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টেই তাদের পথচলা শুরু হয়েছে আগে!
দলটির সবাই যেহেতু পাকিস্তানি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত, তাই দুবাইয়ে আজ কেউ খেলবেন জন্মভূমি বা পিতৃভূমির বিপক্ষে, কেউ ‘শত্রু’ দেশের বিপক্ষে। অতীতে কয়েকবারের চেষ্টাতেও বাছাইপর্বের বাধা পেরোতে পারেনি ওমান। অবশেষে গত বছর এপ্রিলে তাদের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে। নিজেদের মাঠে এসিসি প্রিমিয়ার কাপে রানার্সআপ হয়ে এশিয়া কাপে জায়গা করে নিয়েছে, যেটির শেষ পর্ব এবারের এশিয়া কাপের বাছাই হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টে ওমানকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া জিশান মাকসুদ। তবে গত বছরের অক্টোবরে ওমান ক্রিকেট বোর্ড মাকসুদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলে তিনি দল থেকেও বাদ পড়েন। তাঁর জায়গায় এশিয়া কাপে ওমানকে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের লুধিয়ানায় জন্ম নেওয়া যতীন্দর সিং, যিনি গত বছর মেরুদণ্ডের সায়াটিক নার্ভে তীব্র ব্যথার কারণে ক্রিকেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ভারত ছেড়ে ওমানে পাড়ি জমানোর পর বাবার সঙ্গে কিছুদিন কাঠমিস্ত্রির কাজও করেছেন যতীন্দর। এই যতীন্দরই ওমানের আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি সিঙ্গেল নিতে পারলেই দেশটির প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন।
সময়ের প্রয়োজনে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালের ছেলে সময় শ্রীবাস্তবও ওমানকে নতুন ঠিকানা বানিয়েছেন। এই লেগ স্পিনারেরও এশিয়া কাপে অভিষেক হতে পারে আজ। ওমানের এই দলটাই এশিয়া কাপের সবচেয়ে ‘বুড়ো’; গড় বয়স ৩২ ছুঁই ছুঁই। দলে চলিশোর্ধ্ব দুই ক্রিকেটারের পাশাপাশি পঁয়ত্রিশের বেশি তিন ও ত্রিশের বেশি পাঁচজন আছেন।
তবে অভিষেক এশিয়া কাপে দলটিকে নিয়ে খুব বেশি আশা না করাই ভালো। এখন পর্যন্ত ৯৮টি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মাত্র দুবার টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারাতে পেরেছে ওমান; দুবারই আয়ারল্যান্ডকে। এর মধ্যে একবার আইরিশরা টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে। এবারের এশিয়া কাপে আইসিসির সহযোগী তিন দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হংকংয়ের শুরুটা হয়েছে খুবই বাজে। ওমানের শুরুও তেমন হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।