সরকারি একই দপ্তরে চাকরির সুবাদে ২০২২ সালে দুজনের পরিচয়। এক বছর পর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নারীর অভিযোগ, বন্ধুর বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তাঁকে ধর্ষণ করেন সহকর্মী প্রেমিক। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। সবশেষ নারী বিয়ে না করলে ঘটনা সবাইকে বলে দেবেন বলে হুমকি দেন। তখন প্রেমিক তাঁকে রংপুরে নিজের গ্রামের বাড়ি আসতে বলেন।
নারীর ভাষ্য, প্রেমিকের কথামতো তিনি গত ২ এপ্রিল রংপুর শহরে যান। প্রেমিকের পরিবারের সদস্যরা এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। পরদিন সকালে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। রাতে প্রেমিক শহরের একটি আবাসিক হোটেলে নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কক্ষ ভাড়া করেন। আবার যৌন সম্পর্ক করেন। পরদিন নাশতা কেনার কথা বলে হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রেমিক আর ফিরে আসেননি। এই অবস্থায় নারী তাঁর প্রেমিকের গ্রামের বাড়ি গিয়ে বিয়ের দাবিতে অনশন করেন চার দিন। ১৫ দিনের মধ্যে পারিবারিকভাবে বিয়ের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠান প্রেমিকের পরিবারের সদস্যরা।
তবে প্রতিকার না পেয়ে গত ২২ এপ্রিল রংপুরের তাজহাট থানায় প্রেমিককে আসামি করে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ করেন নারী। থানা-পুলিশ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ ’-এর ৯খ ধারায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।
অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ২৫ মার্চ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে। আইনের ধারা ৯ক-এর পর নতুন ধারা ৯খ সংযোজন করা হয়েছে। ৯খ ধারায় ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম’ করলে দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ২৫ মার্চ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে। আইনের ধারা ৯ক-এর পর নতুন ধারা ৯খ সংযোজন করা হয়েছে। ৯খ ধারায় ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম’ করলে দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, নতুন এই ধারা কার্যকরের পর গত জুলাই মাস পর্যন্ত চার মাসে সারা দেশে ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম’ করার অভিযোগে ২১০টি মামলা হয়েছে।
আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। আর বিয়ের প্রলোভনে যৌনকর্ম করার দণ্ড সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড।
রংপুরের তাজহাট থানার মামলার এজাহারে নারী অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের ১২ মে থেকে ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আসামি।
এই নারী বলেন, তিনি বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মামলায় কোনো অগ্রগতি আছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
রংপুরের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান আলী বলেন, মামলা হওয়ার পর আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। তাঁরা মামলার অভিযোগপত্র তৈরির কাজ করছেন।
আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। আর বিয়ের প্রলোভনে যৌনকর্ম করার দণ্ড সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড।
৯খ ধারায় গত ১ জুলাই রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন চট্টগ্রামের এক তরুণী। তাঁর ভাষ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ঢাকার বাসিন্দা এক তরুণের (২৫)। তরুণ তাঁকে ঢাকায় এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
এজাহারে তরুণী বলেছেন, তিনি ঢাকায় এলে তাঁকে একটি হোটেলের কক্ষ ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা করেন তরুণ। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
এই মামলার বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মেয়েটির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আইনের সংশোধনে শিশু ধর্ষণ অপরাধের বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন, ছেলেশিশুদের প্রতি যৌনকর্মকে ‘বলাৎকার’ নামে অন্তর্ভুক্ত করা, ধর্ষণের মামলায় তদন্ত ও বিচারের সময় কমানো, ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম’ করার দণ্ড নামে নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। আর ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১০ মাসে সারা দেশে ধর্ষণের মামলা হয় ৪ হাজার ১০৫টি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণের মামলা হয় ৩৯২টি। ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৭টি। মার্চে ৪৮৩টি। এপ্রিলে ৫৩৭টি। মে মাসে ৫০৩টি। আর জুনে ৪৯২টি।
বছরভিত্তিক হিসাবে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের মামলা হয়েছে ২ হাজার ৭৪৪টি। ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৩৯৪টি। ২০২৩ সালে ৫ হাজার ১৯১টি। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৩২টি। ২০২১ সালে ৬ হাজার ৩৪১টি। ২০২০ সালে ৬ হাজার ৫৫৫টি।