তিন মাস আগে মিউনিখে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল পিএসজি। সেই ইতিহাস পেছনে ফেলে সবাইকে এখন তাকাতে হচ্ছে সামনে। গতকাল রাতে হয়ে গেল ২০২৫-২৬ চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে লিগ পর্বের ড্র। যেখানে ২০২৬ সালের ৩০ মে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ফেরেঙ্ক পুসকাস অ্যারেনায় অনুষ্ঠেয় ফাইনাল সামনে রেখে যাত্রা শুরুর রূপরেখা পেল দলগুলো।
এই মৌসুমেও ফেবারিট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে পিএসজি, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলকে। তবে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ আর সদ্য ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতা চেলসিও শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। এই দলগুলোর মধ্যে ড্রয়ে কাদের জন্য পথটা কঠিন হলো, আর কাদের জন্য সহজ হলো, তা জেনে নেওয়া যাক।
আর্সেনাল
বড় দলগুলোর মধ্যে আর্সেনালই এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি। মিকেল আরতেতার দল গত মৌসুমে সেমিফাইনালে উঠেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে খেলা হয়নি। এবারের ড্রয়েও নকআউট পর্বে ওঠার পথটা তাদের জন্য মোটামুটি সুবিধাজনক। এমিরেটসে আতলেতিকো মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে আর্সেনাল। সবচেয়ে কঠিন অ্যাওয়ে ম্যাচটা তাদের ইন্টার মিলানের বিপক্ষে। আর্সেনালের জন্য বড় সুবিধা হলো কাইরাত আলমাতির বিপক্ষে খেলাটা তারা ঘরের মাঠেই খেলবে। কারণ, কাজাখস্তানে খেলতে হলে তাদের পাড়ি দিতে হতো ৪ হাজার ২০০ মাইল পথ।
আর্সেনালের ম্যাচ
বায়ার্ন মিউনিখ (ঘরের মাঠ), ইন্টার মিলান (প্রতিপক্ষের মাঠ), আতলেতিকো মাদ্রিদ (প্রতিপক্ষের মাঠ), ক্লাব ব্রুজ (ঘরের মাঠে), অলিম্পিয়াকোস (প্রতিপক্ষের মাঠ), স্লাভিয়া প্রাহা (ঘরের মাঠ), কাইরাত আলমাতি (প্রতিপক্ষের মাঠ) ও অ্যাথলেটিক বিলবাও (ঘরের মাঠ)।
ম্যানচেস্টার সিটি
২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ীরা গত মৌসুমে হতাশাজনক পারফরম্যান্স করেছে। শেষ ম্যাচ ডেতে কোনো রকমে প্লে-অফে উঠেছিল তারা। কিন্তু সেখানে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। এ মৌসুমে পেপ গার্দিওলার দলের জন্য পথটা অবশ্য তুলনামূলক সহজই। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নেই তাদের সামনে। এ ছাড়া ঘরের মাঠে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, বায়ার লেভারকুসেন, গালাতাসারাই ও নাপোলিকে পেয়ে নিশ্চয় খুশিই হয়েছে তারা।
ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচ
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (ঘরের মাঠ), রিয়াল মাদ্রিদ (প্রতিপক্ষের মাঠ), বায়ার লেভারকুসেন (ঘরের মাঠ), ভিয়ারিয়াল (প্রতিপক্ষের মাঠ), নাপোলি (ঘরের মাঠ), বোডো/গ্লিমট (প্রতিপক্ষের মাঠ), গালাতাসারাই (ঘরের মাঠ) ও মোনাকো (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
গত মৌসুমে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে পিএসজি
গত মৌসুমে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে পিএসজিএএফপি
লিভারপুল
গত মৌসুমে লিগ পর্বে শীর্ষে ছিল লিভারপুল। কিন্তু সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি তারা। চ্যাম্পিয়ন পিএসজির কাছে হেরে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। লিগ পর্বে লিভারপুলের এবারের রাস্তাটা অবশ্য সহজ–কঠিনে মিলিয়ে। ঘরের মাঠে তাদের বড় প্রতিপক্ষ দুই স্প্যানিশ ফেবারিট রিয়াল মাদ্রিদ ও আতলেতিকো মাদ্রিদ। অ্যাওয়েতে অবশ্য ইন্টার মিলান ছাড়া চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কোনো দল নেই।
লিভারপুলের ম্যাচ
রিয়াল মাদ্রিদ (ঘরের মাঠ), ইন্টার মিলান (প্রতিপক্ষের মাঠ), আতলেতিকো মাদ্রিদ (ঘরের মাঠ), আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট (প্রতিপক্ষের মাঠ), পিএসভি আইন্দহোভেন (ঘরের মাঠ), মার্সেই (প্রতিপক্ষের মাঠ), কারাবাখ (ঘরের মাঠ) ও গালাতাসারাই (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
বার্সেলোনা
গত মৌসুমে সেমিফাইনালে উঠেছিল বার্সেলোনা। এবার শিরোপাতে চোখ রেখেই প্রস্তুত হবে বার্সা। লিগ পর্বে ঘরের মাঠে বার্সার সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটি পিএসজির বিপক্ষে। এই একটি ম্যাচ ছাড়া নিজেদের মাঠে আর তেমন কোনো কঠিন প্রতিপক্ষ পায়নি হ্যান্সি ফ্লিকের দল। তবে অ্যাওয়েতে গিয়ে চেলসি আর নিউক্যাসলের সঙ্গে খেলাটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে বার্সার জন্য।
বার্সেলোনার ম্যাচ
পিএসজি (ঘরের মাঠ), চেলসি (প্রতিপক্ষের মাঠ), ফ্রাঙ্কফুর্ট (ঘরের মাঠ), ক্লাব ব্রুগা (প্রতিপক্ষের মাঠ), অলিম্পিয়াকোস (ঘরের মাঠ), স্লাভিয়া প্রাগ (প্রতিপক্ষের মাঠ), কোপেনহেগেন (ঘরের মাঠ) ও নিউক্যাসল (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
এবার কি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে পেপে গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি
ইন্টার মিলান
গত মৌসুমের ফাইনালে পিএসজির কাছে ৫-০ গোলে হেরে যাওয়ার উত্তর এখনো খুঁজছে ইন্টার মিলান। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে দাঁড়াতে পারেনি তারা। তবে ইন্টারের সেই কষ্ট কমবে যদি এ মৌসুমে তারা দারুণ কিছু করতে পারে। যদিও এবার সিমোনে ইনজাগির পরিবর্তে নতুন কোচ ক্রিস্টিয়ান শিভুর অধীন খেলবে তারা। নতুন কোচ আসায় ইন্টারকে মূল্যায়ন করাও এখন কঠিন। তবে ঘরের মাঠে লিভারপুল ও আর্সেনালের মুখোমুখি হওয়ায় অন্তত ইংল্যান্ডে গিয়ে কঠিন ম্যাচ খেলতে হচ্ছে না তাদের।
ইন্টার মিলানের ম্যাচ
লিভারপুল (ঘরের মাঠ), বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (প্রতিপক্ষের মাঠ), আর্সেনাল (ঘরের মাঠ), আতলেতিকো মাদ্রিদ (প্রতিপক্ষের মাঠ), স্লাভিয়া প্রাগ (ঘরের মাঠ), আয়াক্স (প্রতিপক্ষের মাঠ), কাইরাত আলমাতি (ঘরের মাঠ) ও ইউনিয়ন সাঁ–জিলোয়া (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
পিএসজি
গত মৌসুমে লিগ পর্বে বেশ ভুগেছিল লুইস এনরিকের দল। শেষ ম্যাচ ডেতে স্টুটগার্টের মাঠে জয় পেয়ে কোনোমতে জায়গা করে নেয় প্লে-অফে। এরপর তো ইতিহাস। সেখান থেকে একেবারে শিরোপাই জিতে ফেলে পিএসজি। তবে এ মৌসুমে লিগ পর্বে আবারও কঠিন প্রতিপক্ষ পেল ফরাসি ক্লাবটি। লিগ পর্বে প্রতিটি ম্যাচ তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখ, টটেনহাম, নিউক্যাসল ও আতলান্তার মতো কঠিন প্রতিপক্ষ পেয়েছে তারা। এমনকি প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচের পথও সহজ নয়। বার্সেলোনা ও লেভারকুসেনের মতো দল সেখানে আতিথ্য জানাবে তাদের। সহজ হবে না স্পোর্তিং লিসবন ও বিলাবাওয়ের মাঠে খেলতে যাওয়া ম্যাচ দুটিও। ফলে বেশ সতর্কই থাকতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
পিএসজির ম্যাচ
বায়ার্ন মিউনিখ (ঘরের মাঠ), বার্সেলোনা (প্রতিপক্ষের মাঠ), আতালান্তা (ঘরের মাঠ), বায়ার লেভারকুসেন (প্রতিপক্ষের মাঠ), টটেনহাম (ঘরের মাঠ), স্পোর্তিং লিসবন (প্রতিপক্ষের মাঠ), নিউক্যাসল (ঘরের মাঠ) ও অ্যাথলেটিক ক্লাব (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
রিয়াল মাদ্রিদ
রিয়াল মাদ্রিদ ইতিহাসের দিক থেকে নির্ভার। চ্যাম্পিয়নস লিগে তারা কখনো গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েনি। প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে নকআউট পর্বে জায়গা করে নেয় তারা। তবে সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীন এবার স্প্যানিশ জায়ান্টদের পথটা মোটেও সহজ নয়। অ্যাওয়ে ম্যাচে লিভারপুলের বিপক্ষে খেলাটা হবে বেশ কঠিন হবে। সহজ হবে না বেনফিকার বিপক্ষে তাদের মাঠের ম্যাচটিও। নবাগত কাইরাত আলমাতির মাঠে খেলতে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ভ্রমণটাও ক্লান্তি বাড়াতে পারে দলটির। নিজেদের মাঠেও রিয়ালকে খেলতে হবে শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। বার্নাব্যুতে ম্যানচেস্টার সিটি, জুভেন্টাস, মার্সেই ও মোনাকোর বিপক্ষে খেলতে হবে আলোনসোর দলকে। কাগজে-কলমে এসব ম্যাচে রিয়াল ফেবারিট, কিন্তু প্রতিটি দলই তাদের সমস্যায় ফেলতে সক্ষম।
রিয়ালের ম্যাচ
ম্যানচেস্টার সিটি (ঘরের মাঠ), লিভারপুল (প্রতিপক্ষের মাঠ), জুভেন্টাস (ঘরের মাঠ), বেনফিকা (প্রতিপক্ষের মাঠ), মার্শেই (ঘরের মাঠ), অলিম্পিয়াকোস (প্রতিপক্ষের মাঠ), মোনাকো (ঘরের মাঠ) ও কাইরাত আলমাতি (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
চেলসি
গত মৌসুমে কনফারেন্স লিগ জেতা দলটি সম্প্রতি ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও বাজিমাত করার ইতিহাস আছে তাদের। ফলে ফেবারিটের তালিকায় রাখতেই হবে ‘ব্লুজ’দের। তবে এনজো মারেসকার দলের সামনে কঠিন সূচিই অপেক্ষা করছে। স্টামফোর্ড ব্রিজে বার্সেলোনার আগমন অতীতের দারুণ লড়াইয়ের স্মৃতি জাগাবে। চেলসির জন্য সহজ হবে না বেনফিকার সঙ্গে ম্যাচটিও। তবে আয়াক্স ও পাফোসের সঙ্গে ম্যাচগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়ার কথা। চেলসির জন্য অ্যাওয়ে ম্যাচগুলো অবশ্য বেশ কঠিন। বায়ার্ন মিউনিখ, আতালান্তা ও নাপোলির মাঠে বিপদে পড়তে হতে পারে চেলসিকে। এ ছাড়া আজারবাইজানে কারাবাগের বিপক্ষে খেলতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। সেটিও তাদের পথকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে।
চেলসির ম্যাচ
বার্সেলোনা (ঘরের মাঠ), বায়ার্ন মিউনিখ (প্রতিপক্ষের মাঠ), বেনফিকা (ঘরের মাঠ), আতালান্তা (প্রতিপক্ষের মাঠ), আয়াক্স (ঘরের মাঠ), নাপোলি (প্রতিপক্ষের মাঠ), পাফোস (ঘরের মাঠ) ও কারাবাগ (প্রতিপক্ষের মাঠ)।
বায়ার্ন মিউনিখ
চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্যতম সফল দল বায়ার্ন মিউনিখ। চ্যাম্পিয়নস লিগ সামনে রেখে এবার বেশ শক্তিশালী স্কোয়াডই সাজিয়েছে তারা। তাদের সামনে শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হবে চেলসি, পিএসজি ও আর্সেনাল। তবে সামগ্রিকভাবে বায়ার্ন নিজেদের আট ম্যাচ নিয়ে হয়তো খুশি থাকবে। নাটকীয় কিছু না হলে শীর্ষ আটে যাওয়াটা তাদের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়।
বায়ার্ন মিউনিখের ম্যাচ
চেলসি (ঘরের মাঠ), পিএসজি (প্রতিপক্ষের মাঠ), ক্লাব ব্রুগা (ঘরের মাঠ), আর্সেনাল (প্রতিপক্ষের মাঠ), স্পোর্তিং লিসবন (ঘরের মাঠ), পিএসভি আইন্দহফেন (প্রতিপক্ষের মাঠ), ইউনিয়ন সাঁ–জিলোয়া (ঘরের মাঠ) ও পাফোস এফসি (প্রতিপক্ষের মাঠ)।