প্রশংসাপত্র এরই মধ্যে পেয়ে গেছে ইগনাসিও পেরেইরা সলোমন। এ মুহূর্তে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে তাকে অন্যতম সেরা প্রতিভা বিবেচনা করা হচ্ছে। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ থেকে শুরু করে অনেক ব্যক্তিত্বও তাকে এ প্রশংসাপত্র দিয়েছেন।
আর্জেন্টাইন ও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সমর্থকদের মধ্যে সলোমনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টানাটানিও চলেছে কিছুদিন আগে। সলোমনের জন্ম আর্জেন্টিনায় কিন্তু বেড়ে ওঠা ব্রাজিলে। ব্রাজিলের ভক্তরা আরেকটু অধিকার খাটিয়ে দাবি করতে পারেন, ‘সে তো সান্তোসের বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়, অতএব আমাদের কেন নয়?’ আর্জেন্টাইন ফুটবলপ্রেমীরা এমন কথা শুনলে মুচকি হাসতে পারেন। টানাটানি করে তো আর লাভ নেই। টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, ব্রাজিলকে এক পাশে সরিয়ে সলোমন নিজেই বেছে নিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। ডাক পেয়েছে আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-১৫ দলে। এ দলের হয়েই সলোমন খেলবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্যারাগুয়েতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কনবেমল লিগা এভল্যুশন প্রতিযোগিতায়।
আমি স্ট্রাইকার। আক্রমণ তৈরিতেও ভূমিকা রাখি। দুই পায়েই খেলতে পারি। হেডও ভালো জানি। আর নিজেকে আমি শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান মনে করি। (ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার) হলান্ড আমার আদর্শ।
ইগনাসিও পেরেইরা সলোমন
আর্জেন্টিনার চাকো প্রদেশ থেকে আগেও সম্ভাবনাময় ফুটবলার উঠে এসেছেন। ১৯ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্লদিও এচেভেরির জন্মও এই প্রদেশে। ১৫ বছর বয়সী সলোমনের মা গ্যাব্রিয়েলা সলোমন আর্জেন্টাইন, চাকো প্রদেশে তাঁর জন্ম। বাবা এদুয়ার্দো পেরেইরা ব্রাজিলিয়ান। আর্জেন্টিনায় বিয়ের পর কয়েক বছর সেখানে ছিলেন এ দম্পতি। তারপর দেশ পাল্টে শিকড় গাড়েন ব্রাজিলের পোর্তো আলেগ্রেয়।
সলোমনের ফুটবলে প্রথম লাথি মারা শুরু ব্রাজিলে। প্রথমে বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাঁচ বছর বয়সে ইনডোরে ফুটসাল খেলে, এরপর ফুটবল মাঠে। সলোমন তার বেড়ে ওঠা স্মরণ করে বলেছে, ‘৯ বছর বয়সে গ্রেমিওর বয়সভিত্তিক দলে যোগ দিই। সেখানে ছিলাম ১২ বছর বয়স পর্যন্ত। জুভেন্তুদে দে কাইয়াক্সাসেসের হয়েও ছয় মাস খেলেছি। দুটি ক্লাব থেকেই অনেক কিছু শিখেছি।’
টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, ১১ আগস্ট আর্জেন্টিনা থেকে ডাক পাওয়ার পর এই ১৫ বছর বয়সী ‘আলবিসেলেস্তে’দের বেছে নেয়। তবে ভবিষ্যতে ব্রাজিলের জার্সিতে খেলার সম্ভাবনাও সলোমন উড়িয়ে দিচ্ছে না।
সান্তোস থেকে ডাক পাওয়ার পর সলোমনের পরিবার পোর্তো আলেগ্রে থেকে সাও পাওলোয় স্থানান্তরিত হয়। ১৩ বছর বয়সে সান্তোসে অনুশীলন চুক্তি করে সলোমন, যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সান্তোসে তার জার্সি নম্বর ৯, অর্থাৎ স্ট্রাইকার। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘দিয়ারিও নর্তে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সলোমন নিজের ফুটবল–সামর্থ্যের বর্ণনা দিয়েছে এভাবে, ‘আমি স্ট্রাইকার। আক্রমণ তৈরিতেও ভূমিকা রাখি। দুই পায়েই খেলতে পারি। হেডও ভালো জানি। আর নিজেকে আমি শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান মনে করি। (ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার) হলান্ড আমার আদর্শ।’ টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সান্তোস অনূর্ধ্ব-১৩ দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিল সলোমন। নেইমারের এই ক্লাবের হয়ে যে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে সলোমন খেলেছে, তাতে গোলের হিসাবে হয়েছিল দ্বিতীয়। সলোমনের মুখেই শুনুন, ‘সান্তোসে আমি ভালোভাবে শেখার সুযোগ পেয়েছি। ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৩ চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছি, যেটা টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মোট ১৫টি গোল করেছিলাম। ২০২৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে করেছি ১০ গোল। এখন আমি অনূর্ধ্ব-১৫ দলের জন্য খেলার জন্য আমি প্রস্তুত।’
দুটি দলের মধ্যে একটির প্রতিনিধিত্ব করলেই গর্ব লাগবে। দুটিই আমার ও আমার পরিবারের ইতিহাসের অংশ এবং বিশ্ব ফুটবলেও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ইগনাসিও পেরেইরা সলোমন
গত জুলাইয়ে ‘দিয়ারিও নর্তে’কে এ কথা বলে সলোমন। তত দিনে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল জাতীয় দলের স্কাউটদের চোখ পড়েছে সলোমনের ওপর। টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, ১১ আগস্ট আর্জেন্টিনা থেকে ডাক পাওয়ার পর এই ১৫ বছর বয়সী ‘আলবিসেলেস্তে’দের বেছে নেয়। তবে ভবিষ্যতে ব্রাজিলের জার্সিতে খেলার সম্ভাবনাও সলোমন উড়িয়ে দিচ্ছে না, ‘দুটি দলের মধ্যে একটির প্রতিনিধিত্ব করলেই গর্ব লাগবে। দুটিই আমার ও আমার পরিবারের ইতিহাসের অংশ এবং বিশ্ব ফুটবলেও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’ এজেইজায় আর্জেন্টিনা ফুটবলের দলের অনুশীলন মাঠ লিওনেল আন্দ্রেস মেসি স্টেডিয়ামে এরই মধ্যে উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে খেলেছে সলোমন, যেখানে জিতেছে আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দল। লিগা এভল্যুশন প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি হিসেবে ম্যাচটি খেলেছে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৫ দল। দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে প্রতিশ্রুতিশীল সব খেলোয়াড়ের মিলনমেলা হবে এই টুর্নামেন্ট, যেটা আসলে ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতা। সলোমন সে প্রতিযোগিতায় ভালো করলে আর্জেন্টিনার মূল জাতীয় দলে খেলার পথে নিশ্চয়ই আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। যদিও ভবিষ্যতে ব্রাজিলের হয়ে খেলার সম্ভাবনাও সে উড়িয়ে দেয়নি। আপাতত অপেক্ষা করাই তাই ভালো; দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়!