গণঅভ্যূত্থানে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বিচারে গুলি বুকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের মেধাবী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি ৩৬ জুলাই নির্মমভাবে গুলি খাওয়া অন্যতম একজন ছিলেন। গণআন্দোলনে অভিশপ্ত গুলি বুকে নিয়ে এখনো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
৫-ই আগস্ট কুটুরিয়া বাস ষ্টেশন থেকে দেলোয়ারসহ হাজারো ছাত্র জনতা একত্রিত হয়ে আর্মি পুলিশ বেরিগেড ভেঙ্গে সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রেডিও কলোনি নামক স্থানে পৌছালে ফাটিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রসীবাহীনী পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এলোপাথারি কাদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এমনকি আগ্নি অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। এতে সংখ্যক জুলাই যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ আহত হয়। দিক বেদিক ছুটতে থাকে আন্দোলনরত সাধারণ মানুষ কিন্তু সতর বঙ্গ করতে পারেনি জুলাই যোদ্ধাদের বুক পেতে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে তারা। জনতার বাধভাঙ্গা স্রোতে পুলিশ ও আওয়ামী শসস্ত্র সন্ত্রসীবাহীনী পিছু হটতে থাকে।
তখন আনুমানিক দুপুর ১২টা দেলোয়ারসহ হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সাভার থানার নিকটবর্তী আন্দোলনে সরব ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আওয়ামী সন্ত্রসীবাহীনী ও পুলিশের এলোপাতাড়ি ছোড়া ছররা গুলি দেলোয়ার শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়। রক্তাত্ত শরীর নিয়েও বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন দেলোয়ার। বিকেল সারে ৪ টার দিকে স্থানীয় ও অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে বেসরকারি হাসপাতাল এনাম মেডিকেল কলেজে ভতি করা হয়। দেলোয়ারসহ শত শত আহতরা চিকিৎসা নেয়। মেডিকেল এর কর্মরত চিকিৎসক দৈনিক ঘোষণা কে জানান, মিছিলে ছাত্রলীগ ও পুলিশ হামলা চালায় দেলোয়ার হোসেনের শরীরে আঠারো থেকে বিশটার মত গুলি লাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমি দুই তিনটা গুলি বের করে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি।
জানা যায় দিলোয়ার হোসেন বাড়ি কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার যশোদল গ্রামের মো: আ: রহমান ও সেলিনা আক্তারের বড় সন্তান।গ্যাজেট নং ৬৬৫ মেডিকেল কেস আইডি নং ৩৭৮৫২।
দিলোয়ার হোসেন দৈনিক ঘোষণা কে বলেন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ব্যবসার সুবাদে তখনো আমি সাভারের কুটুরিয়ায় বসবাস করতাম। ওখান থেকেই আমি আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। আগস্টের ৫ তারিখ সকাল থেকেই আন্দোলন চলাকালীন সাভার থানার নিকটবর্তী স্থান থেকে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে আমার সামনেই একজন ছেলে ও একজন মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে আমরা ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই তারপর আমি আবারো আন্দোলনে শরীক হই, পরে জানতে পারি তারা মৃত্যুবরণ করেছেন। আনুমানিক দুপুর ১২টা দিখে আমিসহ কয়েকশত আন্দোলনকারীর শরীর পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় এবং এতে অর্ধশতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি আরো বলেন, এনাম মেডিকেলের ডাক্তাররা আমার শরীর থেকে বেশ কয়েকটি গুলি বের করেন। পরবর্তীতে গণস্বস্থ্য হাসপাতালে ৩টি অপারেশনের মাধ্যমে ২টি বুলেট বের করা হয়। বর্তমানে মাথায় দুটি ও কোমরে একটি বুলেট রয়েছে। ডাক্তারগণ আমাকে উন্নততর চিকিৎসা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
৫ আগষ্ট সাভারে আহত জুলাইযোদ্ধা নাজমুল হোসেন বলেন, কুটুরিয়ার দেলোয়ার হোসেন আমার সহযোদ্ধা। আমি এখন পিজি হাসপাতালে ভর্তি। দেলোয়ার ভাইয়ের শরীরে এখনও বুলেট রয়েছে। জুলাই যোদ্ধা সুজন মিয়া বলেন, ৫ আগষ্টে আমি ও দেলোয়ার হোসেন আন্দেলনে অংশগ্রহণ করে আহত হয়। আমরা সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার দাবি করছি।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ডেফোডিল ইন্টারন্যাশানাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রত্যয় জানান, কুটুরিয়া থেকে আমরা আন্দেলনে অংশগ্রহণ করি আমাদের সাথে দেলোয়ার ভাইও অংশগ্রহণ করেন তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও মো: কামরুল হাসান মারুফ জানান, দেলোযার সাহেব আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তার সাথে আলোচনা করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব আমরা ইনশাআল্লাহ।