গবেষকেরা বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি সেকেন্ডে কেউ না কেউ সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লাখ লাখ মুসলিম প্রতিদিন এই সুরা পাঠ করেন। শুধু নামাজে নয়, দুঃখ, হতাশা, প্রয়োজন বা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার মুহূর্তেও। কিন্তু আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে, আমরা যে আয়াতগুলো পড়ি, তা কি সত্যিই আমাদের হৃদয়ে পৌঁছায়? আমরা কি অর্থ বুঝে পড়ি, নাকি কেবল ঠোঁট নাড়ি?
পৃথিবীর প্রতিটি সেকেন্ডে কেউ না কেউ সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লাখ লাখ মুসলিম প্রতিদিন এই সুরা পাঠ করেন।
শেষ আয়াতের গভীর দোয়া
মহান আল্লাহ সুরা ফাতিহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘গইরিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায্ যা-ল্লিন।’ অর্থাৎ ‘তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব আপতিত হয়েছে; নয় তাদের পথও যারা পথভ্রষ্ট।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ৭)
এর আগের আয়াতে আমরা প্রার্থনা করি, ‘আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ৬)
এখানে দোয়া আরও স্পষ্ট হয়। আমরা মহান আল্লাহর কাছে সেই পথের তাওফিক চাই, যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন এবং গজব ও পথভ্রষ্টতার পথ থেকে নিরাপদ থাকার ক্ষমতা প্রার্থনা করি।
সঠিক ও ভ্রান্ত পথ
তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, ‘যাদের প্রতি মহান আল্লাহর গজব আপতিত হয়েছে’ বলতে বনী ইসরাইলকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, তারা সত্য জানার পরও তা অমান্য করেছে। আর ‘যারা পথভ্রষ্ট’ বলতে নাসারা বা খ্রিষ্টানদের বোঝানো হয়েছে, যারা সঠিক পথ খুঁজতে চেষ্টা করলেও সঠিক জ্ঞানের অভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা ফাতিহা, আয়াত: ৭)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ইহুদিরা সেই জাতি, যাদের প্রতি মহান আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে, আর খ্রিষ্টানরা সেই জাতি, যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৭৭)
যখন ইমাম “আমিন” বলে, তখন তোমরাও “আমিন” বলো। যার “আমিন” ফেরেশতাদের “আমিন”-এর সঙ্গে মিলে যায়, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৮০
আমরা তখনই সঠিক পথের গুরুত্ব বুঝতে পারি, যখন জানি কোন পথ এড়িয়ে চলতে হবে। যদি অন্ধকার না জানি, তবে আলোর মূল্য বোঝা যায় না।
‘আমিন’ বলার ফজিলত
সুরা ফাতিহা শেষে ‘আমিন’ বলার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন ইমাম “আমিন” বলে, তখন তোমরাও “আমিন” বলো। যার “আমিন” ফেরেশতাদের “আমিন”-এর সঙ্গে মিলে যায়, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৮০)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, ‘আমিন’ বলা কোনো সাধারণ শব্দ নয়; বরং গুনাহ মাফের একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের করণীয়
সুরা ফাতিহা আমাদের প্রতিদিনের নামাজের অংশ, তবে এর তিলাওয়াত ও বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আমাদের পালন করা উচিত।
অর্থসহ তিলাওয়াত: সুরা ফাতিহা পড়ার সময় এর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করা।
দোয়ার গভীরতা: সঠিক পথে চলার তাওফিক এবং গজব ও পথভ্রষ্টতার পথ থেকে নিরাপত্তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
‘আমিন’ বলার নিয়ম: নামাজে ইমামের সঙ্গে আন্তরিকভাবে ‘আমিন’ বলা ও এর ফজিলত সম্পর্কে সচেতন থাকা।
আমরা তখনই সঠিক পথের গুরুত্ব বুঝতে পারি, যখন জানি কোন পথ এড়িয়ে চলতে হবে। যদি অন্ধকার না জানি, তবে আলোর মূল্য বোঝা যায় না।
সুরা ফাতিহা আমাদের নামাজের অন্তরে ও প্রতিটি দোয়ার মাঝে মহান আল্লাহর দরবারে পৌঁছানোর একটি সেতু। এটি শুধু ঠোঁটের উচ্চারণ নয়, হৃদয়ের গভীরতা থেকে উৎসারিত হওয়া উচিত। আমিন উচ্চারণের মাধ্যমে আমরা ক্ষমার বরকত লাভ করতে পারি। তাই আসুন, সুরা ফাতিহাকে শুধু পাঠ নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করি ও এর দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি।
mardia91@gmail.com
মারদিয়া মমতাজ: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী