বয়স বেড়ে চলার সঙ্গে মানুষের চেহারাতেও পরিবর্তন আসে। বয়সের ছাপটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে মুখাবয়বে, বদলে যেতে শুরু করে শরীরের চামড়াও। সব মিলিয়ে বয়স যে লুকানো যায় না—জ্ঞানীরা সে কথাও বলেন।
তবে একজন সম্ভবত ব্যতিক্রম। তাঁকে দেখে বোঝা কষ্ট যে বয়সটা এখন ৪০ বছর। ‘চল্লিশে চালশে’ হওয়া তো দূরের কথা; বরং দেখে এখনো যথেষ্ট তরুণই মনে হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। ফিটনেস নিয়ে পর্তুগালের আল নাসর ফরোয়ার্ড কতটা সচেতন, সে কথা সবাই জানেন। কিন্তু সেটি তো মাঠের খেলার জন্য, যেখানে রোনালদো এখনো সফল। চেহারার বিষয়টি একটু আলাদা। রোনালদোর সমবয়সী অনেকেই বেশ আগে বুটজোড়া তুলে রেখেছেন। তাঁদের চেহারাতেও এখন মুটিয়ে যাওয়া ও বুড়িয়ে যাওয়ার ছাপ। কিন্তু রোনালদোকে কেন এখনো দেখতে তরুণ লাগে, সেই রহস্য ভাঙার চেষ্টা করেছেন নিউইয়র্কের খ্যাতিমান প্লাস্টিক সার্জন ডক্টর এলি লেভিন।
পর্তুগিজ কিংবদন্তি রোনালদোর সঙ্গে লেভিন কখনো কাজ করেননি। তবে তাঁর বিশ্বাস, শরীর এবং মুখে তারুণ্যের লাবণ্যতা ধরে রাখতে রোনালদো প্রচুর অর্থ খরচ করে বেশ কিছু অস্ত্রোপচার ও দাঁতের কাজ করিয়েছেন। আর এটাই সম্ভবত দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময়জুড়ে তাঁর মুখাবয়ব পাল্টে যাওয়ার কারণ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইনকে এ কথা বলেছেন লেভিন। এনওয়াইসি প্লাস্টিক সার্জারি ও ডার্মাটোলজির এই পরিচালক বলেছেন, ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অভিষেকের সময় রোনালদো দেখতে যেমন ছিলেন, এই দুই দশকের বেশি সময়ে সেটা ধীরে ধীরে পাল্টানোর পথে ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ এসেছে তাঁর নাকে। লেভিন মনে করেন, রোনালদো ‘রাইনোপ্লাস্টি সার্জারি’ করিয়েছেন। এটি ‘নাকের কাজ’ নামেও পরিচিত, যার মাধ্যমে নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এর কার্যকারিতাও বাড়ানো যায়। পদ্ধতিটির মাধ্যমে নাকের অসামঞ্জস্যতাও দূর করা যায়। লেভিনের বিশ্বাস, রোনালদোর নাকের হাড় পুনর্গঠন করা হয়েছে। মেইল অনলাইনকে লেভিন বলেন, ‘এটা রাইনোপ্লাস্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে শুধু নাকের মাথা নয়, উপরিভাগও ঠিক করা হয়েছে। পুনর্গঠন করা হয়েছে নাকের হাড়ও।’
শুধু নাক নয়, রোনালদো দাঁতের কাজও করিয়েছেন বলে মনে করেন লেভিন। অবশ্য ক্যারিয়ারে শুরুর দিকে এ বিষয়টি লুকাননি রোনালদো। দাঁতকে আরও সাদা ও সমান রাখতে তিনি কাজ করিয়েছেন। লেভিনের ধারণা, ওপরের মাড়িতে জায়গা কমাতে রোনালদো সম্ভবত অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। তবে রোনালদোর প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী রোনালদোর মতো এনএফএলের ৪৮ বছর বয়সী তারকা টম ব্রাডিকেও দেখতে তরুণ লাগে। তবে লেভিন মনে করেন, ব্রাডি ও রোনালদোর অস্ত্রোপচারের মধ্যে পার্থক্য আছে। রোনালদো অনেক সময় নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে অস্ত্রোপচারগুলো করিয়েছেন। আর ব্রাডি অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু অস্ত্রোপচার করানোয় তাঁর তারুণ্য ধরে রাখাটা সহজাত লাগে না।
রোনালদোর মুখের হাসি দিন দিন দেখতে আরও সুন্দর হয়েছে। তবে ইংল্যান্ডে শুরুর দিনগুলোয় তাঁর দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা ছিল এবং দাঁতের রং বিবর্ণ ছিল। ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর থেকে রোনালদোর হাসি নিখুঁত হতে শুরু করে।
লেভিন মনে করেন, ‘ডেন্টাল ভিনার্স’ ব্যবহার করাই এর কারণ। এ ছাড়া হাসির সময় মাড়ি যেন বের না হয়ে আসে, সে জন্য মাড়িতেও কাজ করিয়েছেন বলে মনে করেন লেভিন। এটা ‘বোটক্স’ ও ‘ভিনার্স’ ব্যবহার করে অর্জন করা সম্ভব হলেও রোনালদো অস্ত্রোপচার করিয়েছেন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। আর এই অস্ত্রোপচার বেশ ব্যথাতুর এবং এতে কসমেটিকস ট্রিটমেন্টও করা হয়েছে। রোনালদো মুখে এসব পরিবর্তন এনে খেলাধুলার দুনিয়ার মাঠের বাইরেও বড় আইকনে পরিণত হয়েছেন এবং বিজ্ঞাপনেও আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন।
স্পোর্তিং লিসবন ছেড়ে ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন রোনালদো। সেখান থেকে ২০০৯ সালে নাম লেখান রিয়াল মাদ্রিদে। এরপর জুভেন্টাস এবং আবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঘুরে এখন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে খেলছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।