ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুল থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে রুফাইদা ফারুক, সুস্মিতা মজুমদার ও সায়মা হোসেন। পরীক্ষার পর তাদের তেমন দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। ‘শিখো- জিপিএ-৫ সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানটি আবার তাদের এক করেছে। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ-আড্ডায় মেতে ওঠে; কথা বলে উচ্চমাধ্যমিকের ভর্তিসহ নানা বিষয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের লেকচার থিয়েটার (এলটি রুম) ভবনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও আয়োজনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নানা আয়োজনে মেতে ওঠে জেলার কৃতী শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই সেখানে আসতে শুরু করে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কৃতী শিক্ষার্থীরা। কেউ ছিল গল্পগুজবে ব্যস্ত, কেউবা ব্যস্ত সেলফি তোলায়। সংবর্ধনার নিবন্ধনের আমন্ত্রণ কার্ড হাতে সারিবদ্ধভাবে নির্ধারিত বুথ থেকে তারা ক্রেস্ট, স্ন্যাক্সসহ উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করে। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল মোট ৮৫৫ শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়।
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। মঞ্চে গান গাইতে গাইতে হাজির হন উপস্থাপক ও বন্ধুসভার বন্ধু শাহজাহান মিয়া। এরপর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই।
আলোচনার শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদৎ হোসেন শিক্ষার্থীদের সত্য তথ্য জানতে পত্রিকা, অনলাইন, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা সাময়িকীর পাশাপাশি ভালো বই পড়ার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি সম্পাদক মতিউর রহমানের দেওয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ জেড এম আরিফ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউনাইটেড কলেজ এবং আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোক্তা ও পরিচালক হারুন অর রশিদ ও শাহীন মৃধা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরিফ হোসেন বলেন, ‘তোমরাই বাংলাদেশ। তোমরা এমন একটি সোনালি বাংলাদেশ উপহার দেবে, যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। আজ থেকে আমরা আশা করছি, তোমরা আমাদের আশাহত করবে না। সমান্তরাল নীতি বজায় রেখে তোমরা একদিকে এগিয়ে যাবে।’ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মনে রাখতে হবে এইচএসসির পরিধি অনেক বড়। লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানের ফাঁকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘মিথ্যা, মাদক ও মুখস্থকে না বলি’ শপথ পাঠ করান শাহীন মৃধা। এ ছাড়া সুধীজনদের আলোচনার ফাঁকে চলে বন্ধুসভার বন্ধু ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বন্ধুসভার বন্ধু হোসাইন জয় ও আনিশা ইসলাম যথাক্রমে গান ও নৃত্য পরিবেশন করে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন। কৃতী শিক্ষার্থী রিদিমা শর্মা ও মৌমিতা তাসরিন নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন। বক্তব্য দেয় শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার, নাদিয়া বেগম ও মৃন্ময়ী পাল।
শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের পেছনে শিক্ষক ও মা-বাবার ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হেড অব কালচারাল ইভেন্ট ও গীতিকার কবির বকুল বলেন, ‘তোমরা ভালো করলে মা–বাবা সবাই খুশি হয়, চারপাশে সবাই আনন্দিত হয়। আমরা দেশকে ভালোবাসি। জিপিএ-৫ই শেষ নয়, মাত্র শুরু। উচ্চমাধ্যমিকে মনোযোগী হতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে। আগামী দিনে জিপিএ-৫ না পেলে হতাশ হবে না। ভালো মানুষ হতে হবে, এতেই জীবনের সব ক্ষেত্রে সাফল্য পাবে।’
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে কুইজ বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেন অতিথিরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার সভাপতি ও আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক অভিজিৎ রায় ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় ছিল কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও বন্ধুসভা।