ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: আজ পবিত্র শবে মেরাজ। বাদে মাগরিব ইমাম শুধু মোনাজাত করবেন। এদিকে সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই রাতটি ইবাদতের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকেন। কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির, দোয়া-দরুদের মধ্য দিয়ে রাতটি কাটান তারা। প্রতি বছর শবে মেরাজ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘লাইলাতুল মেরাজের গুরুত্ব ও তারৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর এই ধর্মকে আরও পরিশুদ্ধ করা এবং আদম আলাইহে ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে শেষ নবী পর্যন্ত মানবজাতিকে হেদায়েতের জন্য বহু মেহনত ও ইসলামের ছায়াতলে দাওয়াতের আহবান জানিয়েছেন। আর এই ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কত না কষ্ট করতে হয়েছে বিশ্ব মুসলিম জাহানের শান্তির দূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। নবী করীম (সাঃ) মুসলমান জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, যা শান্তিকামী ধর্ম ইসলাম আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যখন নবী করিম (সা.) জাগতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হন, তখন তাঁর প্রিয়তমা পত্নী উম্মুল মুমিনীন হজরত খাদিজা (রা.) ও বিপদে আশ্রয়দাতাদাতা চাচা আবু তালিবের আকস্মিক ইন্তেকাল হয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম -এর ৫০ বছর বয়সে মক্কা জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে নবুওয়াতের দশম বছরে ৬২০ খ্রিষ্টাব্দের রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মিরাজের মহিমান্বিত ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। এ রাতেই সপ্তম আসমান পেরিয়ে আরশে আজিমে পৌঁছে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসেন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)। আল কুরআনের পাশাপাশি বহুসংখ্যক বিশুদ্ধ হাদিসেও মিরাজের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুসলমান জাতিকে সঠিক পথ অনুসরন করার জন্য এই রাতের গুরুত্ব অনেক বেশী। ‘মিরাজ’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সিঁড়ি। অন্য অর্থে ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ বা মহামিলন। মিরাজের আসলে দু’টি অংশ রয়েছে: এক. ইসরা ও দুই. মিরাজ। ইসরা অর্থ নৈশভ্রমণ। মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ইসরা বলা হয়। আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন : “মহিমান্বিত আল্লাহ্, যিনি তাঁর বান্দাকে (মোহাম্মাদ (সাঃ)) রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন, পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম থেকে দূরবর্তী মসজিদ মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার সীমানাকে আমি করেছিলাম আমার আর্শীবাদ ধন্য, যেনো আমি তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই একমাত্র যিনি সব শোনেন এবং দেখেন।”(সূরা বনী ইসলাইল : ১)। আর মিরাজ এর অর্থ ওপরে উঠার সিঁড়ি বা সোপান। মসজিদুল আকসা থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়।
কুরআনে আল্লাহপাক আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি [ মোহাম্মদ (সাঃ)) তাকে (জিবরাইল (আঃ)] কে আরেকবার দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। যার কাছে অবস্থিত জান্নাত। যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার তদ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তার দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও হয়নি। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছেন।’ (সূরা আননাজম : ১৩-১৮)। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দিদার এবং কথোপকথন হয়। তিনিই একমাত্র মহামানব, যিনি এ সফরের মাধ্যমে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ তাআলার নৈকট্য, সান্নিধ্য ও দিদার লাভ করার পর জ্ঞান-গরিমায় মহীয়ান হয়ে তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন এবং করুণা ও শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ পুরস্কার হিসেবে আল্লাহর বান্দাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ওই রাত ও উষার সন্ধিক্ষণে আবার মক্কায় নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন।মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর জীবনে ‘মিরাজ’ এমন সময় সংঘটিত হয়েছিল যে সময়টি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুর্যোগময় মুহূর্ত।
কুরাইশদের দ্বারা মহানবী (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের সামাজিকভাবে বয়কট, প্রিয় স্ত্রী হজরত খাদিজা (রাঃ) ও একমাত্র অভিভাবক চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল, তায়েফবাসীর লাঞ্ছনা প্রিয় মহানবীকে মানসিকভাবে মর্মাহত করে। আর এমনই সময়ে মহান আল্লাহর কাছ থেকে আমন্ত্রণ এলো মিরাজের। মিরাজের রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বন্ধুকে একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে আসেন। আল্লাহ রাসূল (সাঃ)কে ইসলামের বাস্তবায়ন রূপরেখা, ভবিষ্যতের কর্মপন্থা এবং মুমিনদের জন্য সর্বোত্তম ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ামতস্বরূপ দান করেন। সে জন্য বলা হয়েছে, ‘আস্সালাতু মিরাজুল মুমিনিন’ নামাজ মুমিনদের জন্য মিরাজস্বরূপ। ইসলামের প্রত্যেকটি ইবাদতের বিধান আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে মহানবী (সাঃ)এর কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু নামাজই একমাত্র ইবাদত যা কোনো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহতায়ালা সরাসরি মহানবী (সাঃ)এর ওপর ফরজ করেছেন। মহানবী (সা.)-এর মিরাজ একটি বিস্ময় সৃষ্টিকারী মুজিজা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের জ্বলন্ত প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজের অনুপম শিক্ষা বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
আখতার-উজ-জামান
কবি, লেখক,গবেষক, সাংবাদিক