মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, আলাস্কায় বৈঠকে বসবেন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য।
ট্রাম্প এক সপ্তাহ আগে বৈঠকের ঘোষণা দেন—যেদিনই রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার শেষ সময়সীমা দিয়েছিলেন, নচেৎ আরও কড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
এ বছরের গ্রীষ্মে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা বৈঠক হলেও শান্তির দিকে কোনও বড় অগ্রগতি হয়নি।
১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নেয়—এই ইতিহাস বৈঠকের স্থান নির্বাচনে বিশেষ তাৎপর্য এনে দিয়েছে। ১৯৫৯ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়।
রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, “দুই দেশ প্রতিবেশী; শুধু বেরিং প্রণালীই আমাদের আলাদা করেছে। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য আলাস্কা যৌক্তিক স্থান।”
শেষবার আলাস্কা বড় কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রস্থল হয় ২০২১ সালের মার্চে, যখন বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে অ্যাঙ্কোরেজে বৈঠক করেন।
হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে—বৈঠক হবে অ্যাঙ্কোরেজে, জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে, যা আলাস্কার বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি এবং আর্কটিক অঞ্চলে মার্কিন সেনা প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে জোর দিয়ে আসছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন।
গত মাসে বিবিসিকে ট্রাম্প জানান, পুতিনের প্রতি তিনি “হতাশ”। পরে ৮ আগস্ট যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষ হলে, তিনি ঘোষণা দেন ১৫ আগস্ট পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক হবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এটি মূলত “শোনার বৈঠক”, এবং আলাস্কার পর ট্রাম্প রাশিয়াও যেতে পারেন। ট্রাম্প বলেন, এটি একটি “পরিস্থিতি বোঝার বৈঠক” যার উদ্দেশ্য পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করানো।
ইউক্রেন কি বৈঠকে যোগ দেবে?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অংশ নেবেন না বলে আশা করা হচ্ছে। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট বৈঠকের আগে বুধবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কি অনলাইনে আলোচনায় বসবেন, যেখানে কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা থাকবেন।
পুতিন জেলেনস্কিকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ করলেও ট্রাম্প আগে তিনপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও চুক্তি “মৃত সিদ্ধান্ত” হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের জন্য কিছু দখলকৃত ভূখণ্ড ফেরানোর চেষ্টা করবেন, তবে হয়তো “ভূমি বিনিময়ের” প্রয়োজন হতে পারে। ইউক্রেন দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে—রাশিয়ার দখলে থাকা কোনও অঞ্চল, এমনকি ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়াও, তারা ছাড়বে না।
পুতিনও নিজের শর্ত থেকে সরেননি—যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা, সেনাবাহিনীর আকার সীমিত রাখা, এবং রাশিয়ার দখল করা ভূখণ্ড ধরে রাখা।
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের তথ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্য এক শান্তি চুক্তিতে ক্রিমিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে থাকবে, আর খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, যে কোনও সমঝোতাই “কারও জন্য নিখুঁত হবে না”, তবে শান্তির জন্য “দৃঢ় নেতৃত্ব” প্রয়োজন।