বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে বিদেশি ক্রিকেটার দেখেছেন, বিদেশি দল কি দেখেছেন কখনো! সব ঠিক থাকলে অভূতপূর্ব এ ঘটনাটিই ঘটতে যাচ্ছে এবার। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট বিসিএলে এবার একটি বিদেশি দলও খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।
বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আকরাম খান কাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিসিএলে একটি বিদেশি দল খেলবে, এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলটা হবে শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের কোনো দল। এটা প্রথম শ্রেণির দল হতে পারে, আবার “এ” দল বা অন্য কোনো দলও হতে পারে।’ তবে ওই সময় শ্রীলঙ্কায় ঘরোয়া ক্রিকেট চলবে বলে আফগানিস্তানের কোনো দলের আসার সম্ভাবনাই বেশি। বিসিএল শুরু হয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট হিসেবে। শুরুতে তিনটি দলের পৃষ্ঠপোষক ছিল, বিসিবি চালাত একটি দল।পৃষ্ঠপোষকেরা চলে যেতে যেতে সর্বশেষ বিসিএলে চারটি দলই বিসিবি চালিয়েছে! টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, এই চার দলের একটিকে বাদ দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া হবে তিনটি দল, চতুর্থ দল হিসেবে খেলানো হবে কোনো বিদেশি দলকে।
বিসিবির ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি অনুযায়ী, অন্য প্রথম শ্রেণির আসর জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) হয়ে যাওয়ার কথা তার অনেক আগেই, যেটি শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১৫ অক্টোবর। বিসিএলের ৫০ ওভারের আসরটি হওয়ার কথা ৪ থেকে ১১ ডিসেম্বর। এবারের এনসিএলেও আবার বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো হতে পারে বলে একটা খবর চাউর হয়েছে সম্প্রতি। যদিও আকরাম খান বলেছেন, ‘এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র।’ অবশ্য এনসিএলের চার দিনের ম্যাচে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। যেহেতু বিসিবি এ ক্ষেত্রে শুধু ম্যাচ ফিই দেয়; বাধ্যতামূলক না হওয়ায় কোনো বিভাগীয় দলই এখন আর টাকা খরচ করে বিদেশি ক্রিকেটার আনে না। শুধু ম্যাচ ফির জন্য তো আর কোনো বিদেশি ক্রিকেটার বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে আসবেন না।
২০১৩-১৪ মৌসুমের পর তাই জাতীয় লিগে আর বিদেশি ক্রিকেটার দেখা যায়নি। দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো বাধ্যতামূলক করলেই কেবল এই লিগে আবার বিদেশি ক্রিকেটার দেখা যেতে পারে।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও টি–টোয়েন্টি এশিয়া কাপ সামনে রেখে এবারও চার দিনের ম্যাচের আগে হবে এনসিএল টি–টোয়েন্টি। জাতীয় লিগের আট দলের অংশগ্রহণে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা এই আসর। সম্ভাব্য ভেন্যু চট্টগ্রাম, সিলেট অথবা ঢাকা। আকরাম খান বলেন, ‘ওই সময়ও বৃষ্টির কিছুটা শঙ্কা থেকে যাবে। আবার বিকেলের দিকে আলো কমে আসতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখে ভেন্যু ঠিক করতে হচ্ছে। এমন কোনো ভেন্যুতে খেলা হবে, যেখানে প্রয়োজনে ব্যবহার করার মতো ফ্লাডলাইট আছে, আবার ওই সময় যেখানে আবহাওয়াও ভালো থাকার সম্ভাবনা আছে। ভেন্যু হিসেবে আমরা চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেটকে বিবেচনায় রাখছি।’ সিলেটে অনুষ্ঠিত গত এনসিএল টি–টোয়েন্টির পরপরই হয়েছিল বিপিএল। তাতে খেলোয়াড়েরা ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ পেলেও বিপিএলের আগে এ রকম একটি টুর্নামেন্ট খেলোয়াড়দের ক্লান্ত করে দিয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। আরেকটা কথাও উঠেছিল, বিপিএলের ঠিক আগে না হয়ে এ টুর্নামেন্টটি বিপিএলের খেলোয়াড় ড্রাফটের আগে হলে ভালো হতো। তাতে ক্রিকেটারদের ম্যাচ প্র্যাকটিস যেমন হতো, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দেখে বিপিএলের জন্য খেলোয়াড় বেছে নিতে পারত, খেলোয়াড়েরাও বিপিএলে নামার আগে একটু বিশ্রাম পেতেন।
আকরাম খান বলেন, এবার সব কূল রক্ষা করার কথা ভেবেই করা হচ্ছে এনসিএল টি–টোয়েন্টি, ‘এবার এনসিএল টি–টোয়েন্টির পর বিপিএলের খেলোয়াড় ড্রাফট হবে। দল গঠনের আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা খেলোয়াড়দের দেখার সুযোগ পাবে।’ সম্ভাব্য সূচি অনুযায়ী, বিপিএলের পরের আসর হওয়ার কথা আগামী জানুয়ারিতে। আর বিদেশি দল নিয়ে বিসিএলের চার দিনের আসর হওয়ার কথা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।