ইসরায়েল যখন ইরানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছিল, তার ঠিক আগের দিন (১২ জুন), যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক MEMRI হঠাৎ ঘোষণা দেয় একটি নতুন গবেষণা প্রকল্প ‘বেলুচিস্তান স্টাডিজ প্রজেক্ট’ বা BSP। এতে বলা হয়, বেলুচিস্তান অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদ—তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম, কপার, কয়লা, রেয়ার আর্থ এবং গভীর সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভরপুর। তাদের দাবি, এই অঞ্চল ইরান ও পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি আদর্শ ঘাঁটি হতে পারে।
MEMRI নামটি অনেকেই চেনেন না। এটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়িগাল কারমন একজন সাবেক ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। MEMRI সাধারণত আরবি, ফারসি ও তুর্কি মিডিয়ার নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করে এমনভাবে প্রচার করে যাতে ইসরায়েলপন্থী বার্তা সামনে আসে। বলা হয়ে থাকে, তারা ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পক্ষে গোপন তথ্য সংগ্রহেও জড়িত।
এই BSP প্রকল্পে এক ‘বিশ্বখ্যাত বেলুচ পণ্ডিত’ মির ইয়ার বেলুচকে উপদেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একতরফাভাবে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দাবি করেন যে ভারতের পাশে ৬ কোটি বেলুচ আছেন। কিন্তু বেলুচ নেতারা তাকে ভুয়া বলে আখ্যা দিয়েছেন। অনেকেই সন্দেহ করেন, এই ব্যক্তি আদতে একটি ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মাধ্যমে বেলুচদের নামে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ইরান ও পাকিস্তান উভয়েই বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ দমন করছে। তারা একে অপরকে বিদ্রোহীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে দোষারোপ করে। এই জটিল বাস্তবতায় ইসরায়েল সেখানে ঢুকে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। উদ্দেশ্য একদিকে ইরানকে চাপে রাখা, অন্যদিকে পাকিস্তানকে দুর্বল করা।
বেলুচ ‘নেতা’ মির ইয়ার বেলুচকে মূলত ভারতীয় মিডিয়া তুলে ধরেছে। তার বার্তা সবই ভারতমুখী এবং ইসরায়েলপন্থী। বিশ্লেষকদের মতে, BSP প্রকল্প শুধু ইসরায়েলের কাজ নয়, ভারতও এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। দুই দেশের এই যৌথ কৌশল বেলুচদের প্রকৃত লড়াইকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলতে পারে।
বিপন্ন জনগোষ্ঠী বা নিপীড়িত জাতিগুলোর পক্ষে শুধুই রাজনৈতিক স্বার্থ দেখে পথ বেছে নেওয়া বিপজ্জনক। যেমন, পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) ইরাকের সঙ্গে মিত্রতা করে কুর্দিদের দূরে ঠেলে দিয়েছিল। আজও ইরান ও পাকিস্তান একই যুক্তিতে কুর্দি ও বেলুচদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তাদের সন্দেহ, এই জাতিগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে।