ঢাকার মাঝখানে যে বাড়িটার ছাদে নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক—তবে শান্তি আছে!
‘আপনি কি এখানে নেট পান?’ মিরপুর ১৩ নম্বরের এক পুরনো তিনতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে এক তরুণ জিজ্ঞেস করল তার প্রতিবেশীকে।
সে বলল, “না ভাই, এখানে দাঁড়ালেই ফোনে ‘No Service’ আসে। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার আছে…এখানে দাঁড়ালে মাথা হালকা হয়ে যায়।”
এই বাড়ির ছাদে উঠে ফোনে কথা বলা যায় না। স্ক্রল করা যায় না। রিন দেখা যায় না।
আশেপাশে ৫ থেকে ৭টা মোবাইল টাওয়ার থাকলেও এই একটা জায়গায় নেট পাওয়া যায় না—কারণ, নাকি এখানে একাধিক টাওয়ারের overlapping signal zone তৈরি হয়, যাকে বলে ‘dead spot’ [সূত্র: বিটিআরসির একজন প্রকৌশলী (অপ্রকাশিত মন্তব্য)]
কিন্তু এই ‘ডেড জোন’ হয়ে উঠেছে এলাকার কিছু কিশোর-তরুণদের লাইভিং জোন। প্রতিদিন বিকেলে ভারা ছাদে এসে বসে—কেউ আড্ডা দেয়, কেউ ছবি আঁকে, কেউ গান গায়, কেউ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আড্ডাটাই জমে ওঠে বেশিরভাগ সময়।
একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, ‘সারাদিন যেই টোকাটুকি, স্ক্রল, স্ক্রল, স্ক্রল…এখানে উঠলেই সেই টানটা কেটে যায়। তখন মাখা খুলে যায়। রাগও কমে অনেকসময়।’
কেউ কেউ বলছেন, এটি ‘ডিজিটাল থেরাপি’।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিরতিহীন স্ক্রিন টাইমের পর যখন হঠাৎ মানুষ নেটওয়ার্ক বা ডিসট্রাকশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন তার মস্তিষ্ক রিচার্জিং মোডে যায়। মানুষ তখন এনারজাইজড ফিল করে।
এই বাড়ির ছাদে নিয়মিত আসেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে বিরক্ত লাগতো। এখন এই নেট না থাকার অভ্যস্ততা হয়ে গেদে আমার শুদ্ধি-মুহূর্ত। মনে হয় নিজেকে একটু সময় দিচ্ছি।’
প্রশ্ন উঠছে—আমরা কি নিজেরা এমন কিছু জয়গা তৈরি করতে পারি?
প্রতিটি এলাকায় যদি ১টি করে ‘ডিজিটাল ব্রেক ছাদ’ থাকে? যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে মোবাইল সিগনাল ব্লকড থাকবে? না স্ক্রল, না রিল, না কল—শুধু নীরবতা, শুধু নিজেকে সময় দেওয়া, একটু আড্ডা জমানো?
এই বাড়িটি কোনো আইটি প্রজেন্ট নয়। কোনো NGO চালায় না। এটি কেবল একটি সাধারণ ছাদ—যেখানে মানুষ একঘণ্টা চুপচাপ থাকাকে বেছে নিচ্ছে নিজের শান্তির জন্য। সত্যি এই ইন্টারনেটের যুগে এসেও এমন হচ্ছে।
এটি নেটওয়ার্ক নেই, এমন একমাত্র জায়গা নয়। এটি হয়তো সেই একমাত্র জায়গা, যেখানে মানুষ নিজের সাথে কানেক্টেড