মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির দিগদর্শন মুসলিম উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত আল্লাহর বাণী পবিত্র ‘আল-কোরআন’। এটি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর প্রতি আল্লাহর কাছ থেকে জিবরাঈল (আ:) মারফত সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অবতীর্ণ হয়।
কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। পবিত্র কোরআনকে সর্বকালের, সর্বদেশের, সর্বলোকের জীবনবিধান ও মুক্তির সনদ হিসেবে আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নাজিল করেছেন।
পবিত্র কোরআন নাজিলের ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ তাআলা উনার পেয়ারে হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (আ:) হতে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর ওহী নাজিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি স্বপ্নে যা দেখতেন তা দিনের আলোর মতো তাঁর জীবনে প্রতিভাত হতো।
হযরত জিবরাইল (আ:) এর মাধ্যমে ওহী প্রাপ্তির আগে আস্তে আস্তে তিনি নির্জনতা প্রিয় হয়ে ওঠেন, হেরা গুহায় নিভৃতে আল্লাহ তাআলার ধ্যানে তিনি মশগুল হয়ে পড়েন এবং বিশাল সৃষ্টি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন।
খাবার পানি শেষ হয়ে গেলে সেসব নেয়ার জন্যেই তিনি শুধু বাড়ি যেতেন। মাঝে মাঝে উনার অতি প্রিয় সহধর্মিণী হযরত বিবি খাদিজা (আ:) উনাকে হেরা গুহায় খাবার দিয়ে আসতেন।
একদিন জিবরাইল (আ:) হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর কাছে এসে গভীর কণ্ঠে তাঁকে বলেন ‘ইকরা‘ পড়ুন। প্রিয় নবী (সা:) বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। উদ্বেলিত কণ্ঠে তাকে বললেন ‘আমি তো পড়তে জানি না’।
জিবরাইল (আ:) তখন হুজুরে পাক হযরত মুহাম্মদ (সা;) কে বুকে চেপে ধরে আবার বলেন, পড়ুন। তৃতীয় বার যখন জিবরাইল (আ:) তাঁকে বুকে আলিংগন করে ছেড়ে দিয়ে বলেন, পড়ুন!
তখন হুজুরে পাক (সা:) ওহীর প্রথম পাঁচটি আয়াত [পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। -সূরা আলাক্ব: প্রথম পাঁচ (১ – ৫) আয়াত।] পড়লেন। তারপর সাথ সাথে হযরত জীবরাঈল (আ:) সেখান থেকে চলে গেলেন। এই হল পবিত্র কোরআন নাজিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।