ভারতের দিল্লি, আসাম, ওডিশা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্যে ‘বাংলাদেশি’ তকমা লাগিয়ে বাংলাভাষীদের হেনস্তার প্রতিবাদে এবার সোচ্চার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
তবে বিরোধী দল বিজেপি বলছে, বিপদে পড়ে বাঙালি বাঙালি জপ করার অভ্যাস তৃণমূলের। এটা রাজনৈতিক কূটকৌশল ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বাঙালি হেনস্তার প্রতিবাদে শামিল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই (এমএল)।
বাংলাভাষীদের এই হেনস্তার প্রতিবাদে কাল বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করবে। যদিও এই হেনস্তার অধিকাংশ শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। মূলত তাঁদেরই বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে ধরপাকড় করা হচ্ছে বেশি।
ভারতের ২৮টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বিজেপি একা শাসন করছে ১৫টি রাজ্যে। আর বিজেপির জোট শাসন করছে আরও ৬টি রাজ্য। কংগ্রেস শাসন করছে তিনটি রাজ্য কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল প্রদেশ। তৃণমূল শাসন করছে পশ্চিমবঙ্গ আর বাম দল সিপিএম জোট শাসন করছে কেরালা। আর অন্যান্য রাজ্যে শাসন করছে রাজ্যের বিভিন্ন ছোটখাটো দল ও বিভিন্ন ছোটখাটো দলের জোট। দেশের বিভিন্ন রাজ্য যেমন দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, আসাম, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, গুজরাট, অরুণাচল প্রদেশ শাসন করছে বিজেপি।
বিরোধীরা অভিযোগ করছে, হিন্দুত্ব প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকসহ বাংলাভাষীদের বিতাড়ন শুরু হয়েছে। এসব শ্রমিককে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে উচ্ছেদ ও বিতাড়নের চেষ্টা হচ্ছে। আসামেও শুরু হয়েছে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাভাষীদের বিতাড়ন ও উচ্ছেদ।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাভাষীদের হেনস্তার প্রতিবাদে পথে নামবেন বুধবার। মিছিল শুরু হবে কলকাতার বইপাড়ার কলেজ স্কোয়ার থেকে আর শেষ হবে কলকাতার ধর্মতলায়।
১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী মোদির পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এক জনসভায় যোগদানের কথা আছে। মমতা তার আগেই এই মিছিল ও প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়ে কার্যত বিজেপিকে চাপে রাখতে চাইছেন। তাই রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রোববার ঘোষণা দিয়েছেন, বুধবার বেলা ২টায় এই প্রতিবাদ মহামিছিল অনুষ্ঠিত হবে। যোগ দেবেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
এই ঘোষণার পর বিজেপির নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘মমতা যখনই বিপদে পড়েন তখনই বাঙালি-বাঙালি মন্ত্র জপ করেন। ভোটে জিততে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের নাগরিক বানানোর চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন বাংলার জনবিন্যাসকে বদলে দেওয়ার।’
কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেছেন, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ও উন্নয়নের জন্য রাজ্য একটি পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ মন্ত্রণালয় খুলে তাদের অভাব অভিযোগ নিরসন করুক।
অন্যদিকে বাম দল সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ঘোষণা দিয়েছে, তারা ১৬ জুলাই কলকাতার ওডিশা ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন। দাবি তুলবেন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের।