৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ কার্যকর না হলে ‘আবারও মাঠে নামব’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের মৌলিক সংস্কার নিয়ে এখনও টালবাহানা চলছে।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ কার্যকর দেখতে চাই। সরকার যদি এই সময়ের মধ্যে এটি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবারও মাঠে নামব। ৩ আগস্ট আমরা ঢাকায় শহীদ মিনারে থাকব। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, যেকোনো দেশের আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশপন্থি একটি রাজনীতি দাঁড় করাতে হবে। বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে হলে আমাদের ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার, দেশের মৌলিক সংস্কার এবং একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও দেশে অনেক সংকট চলমান। কিন্তু একটি নতুন সংবিধানের জন্য কাজ করতে পারছি না।
Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন বলেন, দেশব্যাপী আমরা জুলাই পথযাত্রা শুরু করেছি। এনসিপি কারোর দাসত্ব করবার জন্য এই পদযাত্রা করছে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে আমরা এদেশের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে এসেছি।
এ সময় দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন, রংপুর মহানগরের মুখ্য সমন্বয়ক সাদিয়া ফারজানা দিনাসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ২টায় মাগুরার ভায়নার মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে সরকারি কলেজ রোড দিয়ে চৌরঙ্গী মোড় হয়ে সৈয়দ আতর আলী সড়ক দিয়ে ঢাকা রোড হয়ে পুনরায় ভায়নার মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি। এদিকে সকাল ১০টা থেকে সদর উপজেলার মধ্যে অপেক্ষায় থাকা জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহত পরিবারগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করেননি এনসিপির নেতৃবৃন্দ। তাই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। এরপর নড়াইলের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায় এনসিপির গাড়িবহর।
এদিন বিকালে নড়াইল শহরের পুরাতন বাস টার্মিনালে মুক্তমঞ্চে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ভিনদেশি প্রভুদের ইশারায় যারা কথা বলে, আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করব। আমরা আর কোনো দখলদার, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের হাতে এই দেশের শাসনভার তুলে দেব না।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে হয়েছিল নতুন দেশ গড়ার জন্য, প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য। তরুণরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশ গড়ার আহ্বান নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তার এক বছর পূর্তি হতে চললেও জুলাই শহীদ ও আহতদের আমরা সম্মান দেখাতে পারিনি। আমাদের স্বপ্ন ছিল দলমত নির্বিশেষে নতুন করে দেশ গড়ব। কিন্তু আমরা আস্থা রাখতে পারিনি। অনেকেই এখন গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকার করতে চায় না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছি। দেশে নতুন করে আর যেন কোনো স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। আমরা চাই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমাদের ছেলেরা চাকরি পাক। দেশে কোনো অন্যায় দুর্নীতি থাকবে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। এই দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী দোসরদের জায়গা দেওয়া হবে না। আমরা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস থেকে দেশকে মুক্তি দিতে চাই। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে খুন-গুম করে দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। আপনাদের সন্তানরা রক্তের বিনিময়ে সেই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে এই নড়াইলে দুই-তিনজন শহীদ হয়েছেন। আপনাদের সেই সন্তানদের রক্তের মর্যাদা আজ আমাদের সবাইকে মিলে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা রক্ত দিয়েছেন একটা নতুন বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য। সে কারণেই আমরা মাঠে নেমেছি।’
পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা শুনেছি নির্বাচন কমিশনরা দিনের ভোট রাতে করেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সাক্ষী রেখে ভোট কেটেছে। সেই নির্বাচন কমিশনার হুদার অবস্থা কী তা আপনারা জানেন। জুতার মালা গলায় নিয়ে কারাগারে গেছে। আমরা শুনছি শাপলা প্রতীক আমাদের দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন মিটিং করার আগেই কীভাবে এই খবর প্রচার হলো? ধিক্কার জানাই নির্বাচন কমিশনকে। আপনাদের রিমোট কন্ট্রোল কাদের হাতে তা আমরা জানি।
সভায় বক্তব্য দেনÑ উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, খুলনাঞ্চলের অঞ্চল পরিচালক, মোল্যা রহমতউল্লাহ, অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলী, মাহবুবা সুলতানা রিমি। এ সময় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, জাতীয় নাগরিক পার্টি নড়াইল জেলার প্রধান সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পদযাত্রা ও পথসভা শেষে যশোরের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতারা।
শৈশবে হারালেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা
নড়াইল যাওয়ার পথে এদিন যেন শৈশবে হারিয়ে গেলেন দলটির শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীরা। এদিন গাড়িবহর নিয়ে নড়াইল যাচ্ছিলেন এই জুলাই বিপ্লবীরা। পথে একটি বিল দেখে গাড়ি থামিয়ে প্রথমে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। এ দৃশ্যের একটি ভিডিও ও কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হাসনাত বিলের পানিতে নেমে দলের অন্য নেতাদেরও নামার আহ্বান জানাচ্ছেন। একপর্যায়ে তিনি পাড়ে উঠে এসে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পা টেনে ধরে পানিতে নামানোর চেষ্টা করেন। ওপর থেকে নাসীরুদ্দীনকে ধাক্কা দেন দলের আরেক নেতা সারজিস আলম। পাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে হেসে লুটোপুটি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও অন্যরা।
হাসনাত-সারজিসের যৌথ চেষ্টায় অবশেষে বিলের পানিতে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এরপরই বিলে ঝাঁপ দেন সাদা পাঞ্জাবি আর কালো প্যান্ট পরিহিত সারজিস আলম। এবার পালা নাহিদ ইসলামের। পায়ের জুতা খুলে বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শৈশবে ফিরে যান তিনিও। এরপর একে একে নেমে পড়েন সবাই। বিলের পানিতে নেমেই শুরু হয় নাহিদ-হাসনাতদের নানা কিসিমের খুনসুটি। একপর্যায়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে কাঁধে তুলে পানিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের বীরত্ব জাহির করতে দেখা যায় হাসনাতকে। তা দেখে আনন্দে মাতোয়ারা অন্যরা।
এরপর চিত্রালী বাজার থেকে দৌলতপুর মোড় পর্যন্ত গণসংযোগ ও পদযাত্রা হবে। খুলনায় রাত যাপন করে শনিবার সকালে তারা সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। ইতোমধ্যে দলটির খুলনার নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।