রাজধানীর বাজারে আবারও বাড়তে শুরু করেছে মুরগি ও সবজির দাম। বিশেষ করে দেশি ও পাকিস্তানি জাতের মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে বেশকিছু সবজির দামও ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে; যা ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। তবে স্থিতিশীল মাছ ও তেলের দাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জোয়ার সাহারা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০, করলা ৬০ টাকা, লম্বা ও গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকা, বরবটি ৫০-৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা, ধুন্দল ও ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা (পূর্বে ৫০ টাকা), কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা (আগে ৩০ টাকা), শসা ৬০ টাকা, কাকরোল ৭০, ঢেঁড়শ ৫০ থেকে বেড়ে ৬০, লালশাক প্রতি আঁটি ৪০ টাকা এবং লতির দাম ৮০ টাকা। দেশি আলু ২০ থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে এবং মিষ্টি আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কাঁচামরিচের দাম ১০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্ব নাখালপাড়া সকালের বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রতিদিনই কোনো-না কোনো সবজির দাম বাড়ছে। আজকে (বৃহস্পতিবার) ও ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়তি। ধনিয়া পাতার দাম তত বেশি ছিল না। আজ (গতকাল) আনলাম ৪০০ টাকা করে। এছাড়া টমেটো ভালোটা ১৬০ টাকা আর একটু নরমালটা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেছি।’
বাজার করতে আসা বেসরকারি স্কুলে অফিস সহকারী ফাতিমা আক্তার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সামান্য বেতনে এত দামে বাজার করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে বাঁচাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।
মুরগির বাজারেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিসমিল্লাহ পোল্ট্রি অ্যান্ড সেলস সেন্টারের মালিক মো. নিরব হাওলাদার বলেন, পাকিস্তানি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা, বয়লার ১৫০ থেকে বেড়ে ১৬০, দেশি মুরগি কিছুটা কমে ৬৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেবল লেয়ার মুরগির দাম ৩০০ টাকা কেজিতে অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাংসের বাজারে এখনও কোরবানির ঈদের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অনেকের ঘরেই কোরবানির মাংস সংরক্ষিত থাকায় বাজারে বিক্রি কম। এক দোকানি জানান, সকাল থেকে বসে আছি, ৩ ঘণ্টায় আধা কেজিও বিক্রি হয়নি। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হলেও ক্রেতা সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। আজমেরি মাংস স্টোরের মালিক জানান, খাসির মাংস বিক্রি করছেন ১১০০ টাকা এবং ছাগলে ১০০০ টাকা কেজিতে; তবে বিক্রি কম, অধিকাংশ মাংস হোটেলগুলোতে সরবরাহ করতে হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজারে এসেছে স্বস্তির খবর। অনেক প্রজাতির মাছের দাম কমেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। রুই মাছের বড় সাইজ ৪৮০ থেকে কমে ৩৫০ টাকা, ছোট ৪০০ থেকে কমে ৩৫০ টাকা, কাতল ৪৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৪০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৫০০-৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৭০ থেকে ২৪০-২৫০ টাকা, পাঙাশ ৩২০ থেকে ২০০-২৩০ টাকা, কালি বাউশ ৫০০ থেকে ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০, বাইম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং টোনা মাছ ৩৫০ থেকে কমে ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহিন বলেন, গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকা শহরে মাছ আসা বেড়েছে। এজন্যই দাম কমতে শুরু করেছে। ক্রেতা বকুল ইসলাম বলেন, গতকাল যে মাছ ৪৫০ টাকায় কিনেছি, আজ সেটাই কিনেছি ৩৫০ টাকায়। এই দাম থাকলে আমাদের মতো লোকেরা একটু স্বস্তিতে খেতে পারি।
তেলের বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৮ থেকে ১৯০ টাকায়, পাঁচ লিটারের বোতল ৯০০ থেকে ৯২০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬২ টাকায়। বোতলজাত পাম অয়েল সুপার ১৫০ থেকে ১৫৫ এবং খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৪৮ টাকা দরে।
চালের বাজারেও কিছুটা তারতম্য দেখা গেছে। নাজির, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকায়, পাইজাম ও লতা ৫৩ থেকে ৬২ এবং মিনিকেট স্বর্ণা, চায়না ইরি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আটার দামে পার্থক্য রয়েছে। খোলা আটা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, খোলা ময়দা ৫৬ থেকে ৬০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে।