শুধু বাংলাদেশ নয়, এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা। যিনি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশকে দিয়ে চলেছেন অনন্য সাফল্য। নারী সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়। যেখানে ঋতুপর্ণা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে ভাসেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে নারী এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়েও দুর্দান্ত খেলে চলেছেন বাংলার বাঘিনী।
বুধবার মিয়ানমারের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে এশিয়ান কাপে বাংলার বাঘিনীদের খেলা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এর আগে বাহরাইনের বিরুদ্ধে দলের ৭-০ গোলের জয়েও এক গোল করেন ২১ বছর বয়সী ঋতুপর্ণা।
ম্যাচ শেষে জোড়া গোল করে দলকে জেতানো ঋতুপর্ণা চাকমা ছিলেন খুবই উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়ে এখানে (মিয়ানমার) এসেছি। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেটাই পেরেছি। সমর্থকদের বলব, আমাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তাদের অসংখ্য, অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আগামীতেও যেন আরও সমর্থন দিয়ে যান তারা।’
বাংলাদেশের গ্রুপের চার দলের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে দুর্বল দল তুর্কমেনিস্তান, ১৪১তম। বাছাইও তারা শুরু করে মিয়ানমারের বিপক্ষে ৮-০ গোলে হেরে। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টা প্রত্যাশিতই। তবে এখনো সবকিছু নিশ্চিত ধরে নিতে চান না ঋতুপর্ণা। এই গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল মিয়ানমার, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ৫৫তম। আগের দেখায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা জিতেছিল ৫-০ গোলে। তবে এবার তাদের হারাতে পারার আনন্দ আড়াল করেননি ঋতুপর্ণা।
সামনের পথচলায় এই তারকা ফরোয়ার্ড পাশে চেয়েছেন সমর্থকদেরও। বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারও মেয়েদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে ঋতুপর্ণার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ব্রিটিশ কোচ।
তবে এখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চান না বাটলার। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মিয়ানমারের টেকনিক্যালি ভালো ফুটবলার আছে। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের দমাতে গিয়ে তাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে, তারা হতাশ হয়ে পড়েছিল। তবে (এই জয়ের পর) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনয়ী থাকা, বিনম্র থাকতে হবে আমাদের। কেননা কাজের অর্ধেক হয়েছে। বাকিটা শেষ করতে হবে। পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা করতে হবে আমাদের। বাহরাইন ও মিয়ানমার ম্যাচের প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছি, তাদের বিপক্ষেও একইভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
এখনো আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার বাকি আছে। অনেক কাজ বাকি আছে। সেগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাটলার আরও বলেন, এই মেয়েদের আরও উঁচু পর্যায়ে খেলার সামর্থ্য আছে। আমি মনে করি এখানকার সবাই সেটা জানেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, বাংলাদেশের লিগ চলছে না এবং এ কারণে তাকে ভুটানের ঘরোয়া লিগে খেলতে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তার সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা অন্য কোথাও মানসম্পন্ন লিগে খেলা উচিত। আমি আসলেই আশা করি, সে এগিয়ে যাবে এবং আরও বড় ও ভালো কিছু করবে। কেননা এটা তার প্রাপ্য।
ডিফেন্ডারদের আলাদাভাবে প্রশংসা করে বাংলাদেশ কোচ বলেন, মিয়ানমার আমাদের ওপর তাদের পাসিং গেম চাপিয়ে দিতে পারেনি। তারা হয়ত এক-দুবারই আমাদের আঘাত করতে পেরেছিল। সব মিলিয়ে বলব পুরো কৃতিত্ব আমাদের খেলোয়াড়দের, মেয়েদের। আমি মনে করি তারা দারুণভাবে রক্ষণ সামলেছে। খুবই ভালো করেছে। আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতা এবং বাছাই পেরুনো। এখনো এক ম্যাচ বাকি আছে। আমি যদি ওই ম্যাচে ভালো ফল পাই, তাহলে নিশ্চিতভাবেই উদ্যাপন করব।