যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদ। মঙ্গলবার রাতে মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল ১-০ গোলে হারিয়েছে ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসকে। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে গ্যালাক্টিকোদের হয়ে চোখ ধাঁধানো হেডে একমাত্র গোলটি করেন স্পেনের তরুণ স্ট্রাইকার গঞ্জালো গার্সিয়া।
কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল খেলবে জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে। আগামী শনিবার রাত দুইটায় শেষ আটের ম্যাচে মুখোমুখি হবে রিয়াল ও বরুসিয়া। সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়ার মিশনে কোয়ার্টার ফাইনালের অন্য তিনটি ম্যাচে মুখোমুখি হবে ফ্লুমিনেন্স-আল হিলাল, পালমেইরাস-চেলসি ও পিএসজি-বায়ার্ন মিউনিখ। বুধবার সকালে শেষ ষোলোর অন্য ম্যাচে সারহাউ গুইরেসির জোড়া গোলে বরুসিয়া ২-১ গোলে হারিয়েছে মেক্সিকান ক্লাব মন্টেরেকে।
আটলান্টার মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে মন্টেরের বিপক্ষে মাঠে নামে বরুসিয়া। ম্যাচের ১৪ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় বরুসিয়া। করিম আদিয়েমির জোগান দেওয়া বলে গোল করেন স্ট্রাইকার সারহাউ গুইরেসি। ২৪ মিনিটে বরুসিয়াকে দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে দেন গুইরেসি। এই গোলের পেছনেও অবদান ছিল আদিয়েমির। গুইরেসির জোড়া গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় বরুসিয়া। বিরতির পর ৪৮ মিনিটে জার্মান বারটারেমের গোলে ম্যাচে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করে মন্টেরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল করতে পারেনি তারা।
মিয়ামির ম্যাচে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া ছিল রিয়াল-জুভেন্টাস দু’দলই। সেই লড়াইয়ে দু’দল প্রায় সমান সমান থাকলেও, আক্রমণে এগিয়েছিল রিয়ালই। ২১টি শট নিয়ে ১১টি লক্ষ্যে রাখতে পারে রিয়াল। অন্যদিকে ৬টি আক্রমণের ২টি লক্ষ্যে রাখে জুভেন্টাস। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিল না কোনো দলই। বিরতির পর গোল পেয়ে যায় রিয়াল। ৫৪ মিনিটে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ডের ক্রস থেকে দর্শনীয় হেডে গোল করেন গার্সিয়া। চলতি আসরে এটি নিজের তৃতীয় গোল স্প্যানিশ তরুণের।
ম্যাচের বাকি সময় আর কোনো গোল না হলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল। ম্যাচ শেষে গার্সিয়ার প্রশংসা করেন রিয়াল কোচ জাবি অ্যালানসো। তিনি বলেন, আমার মনে হয় দিন দিন উন্নতি করছে গার্সিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ৩-৪ দিনে আরও সুযোগ আছে তার। আমরা তার ওপর নজর রাখছি। প্রতিদিন তার সঙ্গে কথা বলি। আমার মনে হয় কোয়ার্টার ফাইনালে আরও ভালো করবে সে।
রিয়ালের হয়ে প্রথম একাদশে যখন নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন গার্সিয়া, কোচের আস্থা তার ওপর তো আছেই। কিন্তু চার ম্যাচে তিনি গোল করে ফেলবেন তিনটি, এতটা ভাবতে পারেনি কোচ জাবি। কদিন আগেও ফুটবল বিশ্বের খুব কম লোকই চিনত তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে। সেই তিনিই এখন ক্লাব বিশ্বকাপের চমক, তারকায় ঠাসা দলের নতুন রতœ। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত রিয়াল কোচ।
কিলিয়ান এমবাপে অসুস্থ না হলে আর এনড্রিক চোটে না পড়লে হয়ত ডাগআউটেই বসে থাকতে হতো গার্সিয়াকে। প্রথম একাদশে জায়গা তো মিলত না নিশ্চিতভাবেই। সেই তরুণই এখন ম্যাচের পর ম্যাচে রিয়ালের নায়ক। ক্লাব বিশ্বকাপের চার ম্যাচে সরাসরি অবদান তার চার গোলে। একটি গোলে সহায়তা করেছেন, নিজে করেছেন তিনটি।
২০০৪ সালের মার্চে মাদ্রিদেই জন্ম গার্সিয়ার। ১০ বছর বয়সে যোগ দেন রিয়ালের একাডেমিতে। ২০১৮ সালে তার পরিবার মায়োর্কা শহরে চলে যাওয়ায় তিনিও চলে যান রিয়াল মায়োর্কার একাডেমিতে। তবে আবার রিয়ালের একাডেমিতে ফিরে আসেন পরের বছরই। রিয়ালের ‘বি’ দল বা কাস্টিয়ার হয়ে তার অভিষেক ২০২২ সালে। তবে আলোয় আসেন তিনি গত মৌসুমে। ২৫টি গোল করেন তিনি, এক মৌসুমে যা কাস্টিয়ার রেকর্ড। এই পারফরম্যান্সের পথচলায় রিয়ালের মূল দলেও সুযোগ পেয়ে যান।
গত ফেব্রুয়ারিতে কোপা দেল রেতে লেগানেসের বিপক্ষে শেষ সময়ের গোলে রিয়ালের ৩-২ গোলে জয়ের ম্যাচে প্রথম গোলের দেখাও পান। তবু এনড্রিক ফিট থাকলে হয়ত ক্লাব বিশ্বকাপে তার জায়গা হতো না। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর অনুশীলনে পারফরম্যান্স আর এমবাপের অসুস্থতা মিলিয়ে প্রথম ম্যাচে সেরা একাদশে জায়গা পান। আল হিলালের বিপক্ষে সেদিন গোল করার পর থেকে চলছে তার দারুণ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা।