সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে এক দলিলে ৮০ হাজার টাকা প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা ৩০ জুন সাব-রেজিস্ট্রারের বিশেষ কক্ষে ঘটলেও জানাজানি হয় বুধবার (২ জুলাই) সকাল ৯টায়।
অন্যদিকে জমির শ্রেণি ও প্রকৃত মূল্য আড়াল করে দলিলে কম মূল্য দেখিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন মোশারফ হোসেন। তিনি বালাগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার হলেও সপ্তাহে দুইদিন দায়িত্ব পালন করেন ওসমানীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওসমানীনগরে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় মোশারফ হোসেন ওসমানীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদানের পর জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন ও প্রকৃত বাজার মূল্য কম দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করে কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও এবার চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ায় দলিল রেজিস্ট্রি না করার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলার উসমানপুর গ্রামের (বর্তমান) সিলেট ভার্তখলা স্বর্নালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মুহিব এহতেশাম ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকায় নিজের ১১ শতক বাড়ি বিক্রি করেন একই গ্রামের মৃত আকলিছ মিয়ার পুত্র শাহীন মিয়ার কাছে। ৩০ জুন দেড়টায় শাহীন মিয়া রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে সরকারি ফি জমা দেওয়ার পর অফিসে অতিরিক্ত আরো ২ পার্সেন্ট ঘুষ প্রদান করে উপস্তিত হন উপজেলার তাজপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে।
শাহীন মিয়ার দলিলটি সাব রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন এজলাস কক্ষে পৌঁছার পর তিনি দলিলটি যাচাইকরণে কোন ত্রুটি বেড় করতে পারেননি। দীর্ঘ যাচাইকরণ পর এক পর্যায়ে দলিল রেজিস্ট্রিতে অনিহা প্রকাশ করেন সাব রেজিস্ট্রার।
এতে শাহীন মিয়া ও তার মুহরীর দলিল রেজিস্ট্রি না করার কারণ জানতে চাইলে তাদের ‘খাস কামড়ায়’ যাওয়ার আহ্বান করেন তিনি। ‘খাস কামড়ায়’ যাওয়ার পর অফিসের ২ পার্সেন্টসহ তাকে অতিরিক্ত ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার বায়না ধরেন। ২ পার্সেন্ট অফিসে দেওয়া আছে বলার পরও তিনি বায়নার ৮০ হাজার টাকা থেকে সরে আসেননি।
অবশেষে দলিল রেজিস্ট্রি পক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। তাতেও সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রিতে রাজি না হলে ‘খাস কামড়ায়’ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ মারমুখী ভূমিকায় চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ পরিস্তিতি শান্ত করলেও প্রায় দুইদিন আগের এ ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনাটি গতকাল রাত থেকে ফাঁস হওয়ার পর উপজেলা রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
দলিল রেজিস্ট্রি পক্ষের মুহরি মো. মকবুল হোসেন জানান, দলিলে কোনো ত্রুটি না থাকার পরও সাব রেজিস্ট্রার প্রকাশ্যে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। অনেক দর কষাকষির পর দলিল রেজিস্ট্রিপক্ষ ৩০ হাজার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তিনি ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ পয়সাও কম হবে না বলে অনড় থাকেন। এ নিয়ে ভেতরে হট্টগোল হয়। পরে তিনি নিজেই পুলিশ কল দেন। পুলিশের সামনেই ঘুষের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। কাজের স্বার্থে বিভিন্ন সময় তিনি নিজে সাব রেজিস্ট্রারকে অর্ধকোটি টাকার উপরে ঘুষ দেওয়ার দাবি করেন মো. মকবুল হোসেন।
এ বিষয়ে অভিযোক্ত সাব রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন ব্যক্তিগত মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি এ প্রতিবেদককে ফিরতি জওয়াব না দিয়ে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে একটি পক্ষের উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানেই বিষয়টি সমাধান হলে কেউ আর অভিযোগ দেয়নি। বিস্তারিত সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম জানান, সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। অতিরিক্ত ঘুষ গ্রহণের দাবিটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।