তিনবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় ব্যর্থতার মুখ দেখেও হাল ছাড়েননি নেহা বেয়াদওয়াল। মোবাইল ফোনকে ‘ব্রেকআপ’ জানিয়ে টানা ৩ বছর নিজের জীবনকে শুধুই পড়াশোনার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন। আর এই আত্মত্যাগ ও অধ্যবসায়ের ফসল হিসেবেই চতুর্থবারের চেষ্টায় ভারতের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষায় অল ইন্ডিয়া র্যাঙ্ক (AIR) ৫৬৯ অর্জন করে আইএএস অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন এই তরুণী।
বর্তমানে নেহার বয়স মাত্র ২৫। কর্মরত আছেন গুজরাটে। এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে, রাজস্থানে জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা ছত্তিশগড়ের রায়পুরে। ছোটবেলায় পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিলেন না নেহা। এমনকি পঞ্চম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হয়েছিলেন তিনি। তবে সেই ব্যর্থতা তাকে দমিয়ে রাখেনি। বরং আরও শেখার আগ্রহ জাগিয়েছিল।
পরবর্তীতে বাবার সঙ্গে তিনি ভোপাল চলে যান। ভর্তি হন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে, যেখানে হিন্দি বললে জরিমানা হতো! শুরুতে সমস্যা হলেও দ্রুতই সেই বাধা পেরিয়ে যান।
নেহার বাবা একজন সিনিয়র আয়কর কর্মকর্তা। বাবার পথ অনুসরণ করেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেন নেহা। কিন্তু সাফল্য সহজে ধরা দেয়নি, প্রথম তিনবারই ব্যর্থ হন। এরপরই জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেন মোবাইল ফোন ছেড়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ।
নিজেই জানান, “টানা ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা পড়তাম। প্রায় তিন বছর মোবাইল ফোন ব্যবহারই করিনি।”
শেষ পর্যন্ত, ২৪ বছর বয়সে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন। ইউপিএসসি পরীক্ষায় মোট ৯৬০ নম্বর পেয়ে আইএএস অফিসার হিসেবে জায়গা করে নেন।
তবে নেহা মনে করেন, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের চেয়ে বড় ত্যাগ করেন তাদের পরিবার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “কোথাও না যাওয়া বা কিছু না কেনা কোনো ত্যাগ নয়। আসল ত্যাগ তখনই হয়, যখন দীর্ঘ কর্মদিবসের পর বাড়ি ফিরে বাবা তার সন্তানকে পড়াতে বসেন।”
তিনি আরও জানান, তার এই যাত্রায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য পাশে ছিলেন। ভাই থেকে শুরু করে খালা পর্যন্ত সবাই তাকে চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য তৈরি করতে সাহায্য করেছেন।
নেহার মতে, “এই যাত্রা আমাদের শেখায় কীভাবে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কখনও হাল না ছাড়া।”