এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, দেশে গণঅভ্যুত্থানের সুযোগ এলেও রাজনৈতিক দলগুলো সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ। তিনি বলেন, “আমরা যে সংস্কারের কথা বলেছিলাম, যে দাবিগুলো হাসিনার সরকারের কাছে রেখেছিলাম, সেই একই দাবির বিরোধিতা এখন করছি নিজেরাই। এটাই প্রমাণ করে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি নিজেরাই সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে যুক্তিতে শেখ হাসিনা সংস্কার করেননি, আজ অনেক দল সেই একই ভাষা, যুক্তি ও আচরণে সংস্কারের পথ রুদ্ধ করছে। এটি কোনোভাবেই ১৪০০ শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান হতে পারে না। এটা আসলে গাদ্দারির লক্ষণ, এটা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তির ইঙ্গিত।”
গত বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “২০২৪ সালের জুন মাসে আমরা ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করেছি। দক্ষিণাঞ্চলে লাখো মানুষ পানিবন্দি ছিল। সেই সময় আওয়ামী লীগের শেষ বাজেট দেওয়া হয়, যেখানে দুর্গতদের জন্য চাল ও টাকার বাজেট বরাদ্দ ছিল।”
তিনি বলেন, সেই সময়েই কোটা সংস্কারবিরোধী রায় আদালতের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। “আওয়ামী লীগ আবার কোটা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল, যা স্পষ্টতই ২০১৮ সালের আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। সেই সময়েও আমরা রাজপথে ছিলাম, আন্দোলন করেছি, ব্রিফিং করেছি।”
ব্যারিস্টার ফুয়াদ অভিযোগ করে বলেন, “গত বছরের আন্দোলনের সময় অনেক বড় রাজনৈতিক শক্তি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল। তারা বলেছে— এই আন্দোলনের পেছনে ‘সরকারি চক্রান্ত’ আছে। অথচ তখনকার আন্দোলন ছিল শহীদের রক্তে গড়া। কেউ যদি সেই আন্দোলনের ক্রেডিট নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, সেটা হবে ৭১-এর চেতনা বিক্রির মতোই জঘন্য।”
তিনি বলেন, “১৪০০ শহীদের রাজনীতি করে কেউ যেন আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করতে না চায়, দিল্লির গোলামি কায়েম না করে। যারা নিজেদেরকে ‘আন্দোলনের নায়ক’ দাবি করছেন, তারা গত বছরের ক্যালেন্ডারে কোথায় ছিলেন?”
আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমরা যেন ভুলে না যাই প্রত্যেক শহীদ ছিলেন এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। আমরা সবাই কেবল তাদের কর্মী। আন্দোলনের নেতৃত্ব, অবদান আর দায়িত্ব একসাথে বুঝে নিতে হবে। বাংলাদেশ গড়তে হলে নিজেদেরকে বদলাতে হবে। না হলে ইতিহাস শেখ হাসিনার মতো অন্যদেরও মিরজাফরের কাতারে বসাবে।”
বক্তব্যে তিনি বলেন, “আপনারা ঠিক করেন মিরজাফরের মতো মরবেন, না ১৪০০ শহীদের পক্ষে লড়বেন। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম একটি নতুন রাষ্ট্র চায়, সেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। এটাই আমাদের শপথ।”