ইসলামে আজানের জবাব দেওয়া সুন্নত। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি শুধু যে নামাজের সময় জানায়. তা নয়; বরং আমাদের আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে আহ্বান করে।
আজ আমরা আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম শিখব।
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
আজান শুনলে মুমিনের উচিত মুয়াজ্জিন যা যা বলেন, তা–ই আবার নিজের মুখে বলা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন আজান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলবে, তা বলো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮৩)
তবে দুয়েকটি বাক্যে সামান্য ব্যতিক্রম আছে। আজানের প্রতিটি বাক্যের উচ্চারণ এবং তার জবাব নিচে দেওয়া হলো:
মুয়াজ্জিন: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
জবাব: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
মুয়াজ্জিন: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
জবাব: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
মুয়াজ্জিন: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
জবাব: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
মুয়াজ্জিন: হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ।
জবাব: এই দুটি বাক্যের জবাবে বলুন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (কোনো উপায় বা ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া)।
মুয়াজ্জিন: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
জবাব: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’।
মুয়াজ্জিন: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
জবাব: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
ফজরের আজানে ‘আস–সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ (নামাজ ঘুমের চেয়ে উত্তম) বলা হলে, জবাবে বলতে হবে, ‘সাদাকতা ওয়া বারারতা’ (তুমি সত্য ও ন্যায় কথা বলেছ)।
আজান শুনলে করণীয়
আজান শুনলে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। কথাবার্তা বা অন্য কাজ বন্ধ করে মুয়াজ্জিনের বাক্য পুনরুক্তি করা মুস্তাহাব। আজান যখন আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করে, তখন জবাব দেওয়ার মাধ্যমে মুমিনও সেই ঘোষণায় শরিক হয়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে তা পুনরুক্তি করে, শয়তান তার থেকে দূরে পালায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮৯)
আজানের পর দোয়া
আজান শেষ হলে একটি বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজানের পর এই দোয়া পড়বে, তার জন্য (কেয়ামতের দিন) আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৪)
দোয়াটি হলো:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাতি, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা, ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযি ওয়া‘আদতাহু, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মি’আদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, এই পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রতিপালক তুমিই, হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে দান কর ওয়াসিলা (সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও সুমহান মর্যাদা এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে পৌঁছে দাও, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ, নিশ্চয় তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করো না।’
আজকাল অনেকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আজান শোনেন। এমন ক্ষেত্রেও জবাব দেওয়া যায়, তবে মসজিদের আজান শুনে জবাব দেওয়ার মর্যাদা বেশি। আজান শুনলে যেখানেই থাকুন, কাজ থামিয়ে মুয়াজ্জিনের বাক্যটি নিজেই বলুন।
গাড়ি চালানোর সময় বা কাজের মধ্যে হলেও মনে মনে জবাব দেওয়া যায়। আজান শেষ হলে ওপরের দোয়াটি পড়ুন। নারী–পুরুষ উভয়ের জন্যই এই সুন্নাহ প্রযোজ্য। তবে হায়েজ বা নিফাসের সময় নারীরা জবাব দেবেন না।