শুক্রবার ইরানের উত্তরাঞ্চলে মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্পের পর দেশটিতে গোপনে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে—এমন জল্পনা শুরু হয়। তবে ভূকম্পবিদরা দ্রুতই এই দাবিকে খণ্ডন করেছেন, এবং স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখিয়ে বলেছেন—এই কম্পন ছিল প্রাকৃতিক।
এই ভূমিকম্পটি আলবর্জ পর্বতমালায় ১০ কিলোমিটার গভীরতায় সংঘটিত হয় এবং রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫-এর বেশি। সুমের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রামথান জানান, এটি ঐতিহাসিকভাবে ওই অঞ্চলে দেখা যাওয়া স্বাভাবিক ভূকম্পনের ধরণ অনুসরণ করেছে।
তিনি বলেন, “এটি ছিল একটি ক্লাসিক রিভার্স ফল্ট টাইপ ভূমিকম্প, যা বিশ্বব্যাপী ১৪৯টি স্টেশনে রেকর্ড করা হয়েছে। এত গভীরে কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো ভৌগোলিকভাবে অসম্ভব।”
রামথান ব্যাখ্যা করেন, ভূকম্পন তরঙ্গগুলোর মধ্যে প্রাথমিক (P) এবং গৌণ (S) তরঙ্গের ধরণ একেবারে প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের মতোই ছিল। আন্তর্জাতিক ভূকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলো, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS), এই ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক উৎস নিশ্চিত করেছে।
তিনি গোপন পারমাণবিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়ে বলেন—যেকোনো সক্রিয় ফল্ট লাইনের কাছে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হলে তা ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি করে, যা বিশ্বের সব পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশই এড়িয়ে চলে।
রামথান আরও বলেন, “পারমাণবিক পরীক্ষাজনিত কম্পন সাধারণত খুবই অগভীর হয় এবং খুব কমই মাত্রা ৩ ছাড়ায়। কিন্তু এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫-এর বেশি, যার শক্তি মিলিয়ন টন টিএনটি বিস্ফোরণের সমতুল্য—এটি বর্তমান পারমাণবিক প্রযুক্তির বাইরে।”
তিনি শেষ পর্যন্ত এই গুজবকে “বৈজ্ঞানিক অজ্ঞতা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্ররোচনা” বলে মন্তব্য করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, এই ভূমিকম্প ছিল পুরোপুরি প্রাকৃতিক।