বাংলাদেশে এক শ্রেণির ভুঁইফোড় সংগঠন মানবাধিকারের নামে গজিয়ে উঠেছে। মানবাধিকার রক্ষার শপথ নেওয়ার সময় একটা বাক্য থাকতে হবে, দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য মানবাধিকার সংগঠন কাজ করবে। আওয়ামী লীগ হোক কিংবা অন্য দল যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে সে যেন শাস্তি পায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হল রুমে বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ১৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এম আবদুল্লাহ বলেন, এমন এক সময়ে আমরা এসেছি যখন বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে, পদদলিত হচ্ছে। একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ইরানে হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। একইভাবে তারা ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে নারী শিশুসহ মানুষ হত্যা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৭ বছর দানবীয় শাসনের মধ্যে ছিলাম, যেখানে মানবাধিকার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না। এই অবস্থা থেকে গত বছরের ৫-ই আগস্ট একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি পর্যায়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার হরণ পুরোপুরি কি বন্ধ হয়, শাসন ও শাসক পরিবর্তন হয় কিন্তু মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত হওয়া, লঙ্ঘন করা মাত্রাগত দিক থেকে পার্থক্য নিশ্চয় আছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতর হচ্ছে গুম। গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবার লাশ পর্যন্ত খুঁজে পায় না, যেটি মানবাধিকারের নিকৃষ্টতম লঙ্ঘন।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি বলেন, একটি জুলুমি শাসনের মধ্য দিয়ে আমাদের দিন অতিবাহিত হয়েছে। গত ১৬টি বছর, বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেন সময় থেকেই এই গুমের সংস্কৃতি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে।
এম আবদুল্লাহ বলেন, যারা সাংবাদিকতা করে তারা সবাই মানবাধিকার কর্মী। যে কোনো মানবাধিকার হরণের পরে সবার আগে পুলিশ এবং সাংবাদিকদের স্মরণ করেন সাধারণ ভুক্তভোগীরা। কারণ অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকরাই কলম ধরেন। পুলিশও যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে পুলিশের প্রতিটি সদস্য মানবাধিকার কর্মী।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো যদি নিজেদের সক্রিয় অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে পারে তাহলে তা সার্থক হয় এবং কার্যকারিতা দেখা যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ১৬ বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছে, যেটি সোজা বিষয় না। সফলতম সংগঠন হিসেবে কাজ করবে এই সংগঠন। বাংলাদেশে মানবাধিকারের পক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ভূমিকা রাখবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি মুহাম্মদ মুসলিম বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সাথে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। তারা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থাকতে দেখেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় এই সংগঠনটি শিক্ষা উপকরণও দিয়েছে। ঠিক একইভাবে বুলিংয়ের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের পাশে আগে যেমন ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে সংগঠনটি—এটিই আমার প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অতিরিক্ত মহাসচিব সাংবাদিক নুরউদ্দীন খান সাগরের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাফর হায়দারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি মুহাম্মদ মুসলিম, উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজা প্রমুখ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী হিসাব নিয়ন্ত্রক প্রশাসন এনামুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল, বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মহিউদ্দীন স্বপন, জি.এম আইটির চেয়ারম্যান কামরুল কায়েস চৌধুরী, নাসিরাবাদ পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আবদুর রব সোহেল, রবিউল হোসেন রবি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন, গোলাম সরোয়ার প্রমুখ।