সিনেমা মুক্তির আগেই পোস্টার, টিজার ও আইটেম গান মন্দ ছিল না। মোটের ওপর দর্শকদের আগ্রহের বিচারে ওপরের দিকেই ছিল বাণিজ্যিক সিনেমাটি। মুক্তির পরে ‘ইনসাফ’ কি পারল দর্শকদের প্রত্যাশা মেটাতে? টিজারে ভেসে আসা ভয়েস ওভারের সূত্র ধরেই শুরু হয় ‘ইনসাফ’। ঢাকা শহরে হঠাৎ অপরাধ বেড়ে গেছে। সবাই ভাবছে, এর পেছনে রয়েছেন একসময়ের ত্রাস, ডন ইউসুফ। তবে ইউসুফ তো ঢাকার বুক থেকে হারিয়ে গেছেন পাঁচ বছর আগে। তাঁর লাশও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কি ইউসুফ মরেননি? নাকি নতুন কোনো ত্রাস এসেছে এ শহরে? একনজরে
সিনেমা: ‘ইনসাফ’
ধরন: অ্যাকশন–থ্রিলার
রানটাইম: ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
কাহিনি: নাজিম উদ দৌলা, স্বরূপ দে, সঞ্জয় সমাদ্দার
চিত্রনাট্য: নাজিম উদ দৌলা
পরিচালক: সঞ্জয় সমাদ্দার
অভিনয়: শরীফুল রাজ, তাসনিয়া ফারিণ, ফজলুর রহমান বাবু, মিশা সওদাগর, মোশাররফ করিম
পুলিশ বিভাগ ইউসুফের মৃত্যুর খবর পেয়ে যখন তাঁর কেস বন্ধ করতে যাচ্ছে, তখনই এএসপি জাহান খান গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র পান। জানতে পারেন, ইউসুফ এখনো মারা যাননি। অনেক খুঁজে ও সূত্র ধরে বুঝতে পারেন, ইউসুফ গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন সিলেটে। সিলেটের পথে পা বাড়ান জাহান। সেখানে পাওয়া যায় লাবু মাস্টারকে, যার কিনা ইউসুফের সঙ্গে চেহারার হুবহু মিল। কিন্তু সব সূত্র মিথ্যা প্রমাণ করে দেয় লাবু মাস্টার। দুঁদে পুলিশ জাহানও একপর্যায়ে মেনে নেন—এ ইউসুফ নন, নেহাতই এক আর্টের টিচার, লাবু মাস্টার। কিন্তু তত দিনে ইউসুফকে যাঁরা মেরেছেন, তাঁরা পিছু নিয়েছেন লাবু মাস্টারের। সহজ–সরল লাবু মাস্টারকে বাঁচতে দেবেন না তাঁরা। পুলিশ অফিসার জাহানের একটা ভুল কি লাবু মাস্টারের জীবন বিপন্ন করে তোলে? নাকি ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে?
‘ইনসাফ’–এ লাবু মাস্টার ও ইউসুফ দুটি চরিত্রেই অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ। আগে ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘দেয়ালের দেশ’–এ অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। তবে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ধারার অ্যাকশন সিনেমায় রাজ এই প্রথম অভিনয় করলেন। সিনেমায় দুটি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করলেও তিনি চরিত্র দুটি বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজের বিপরীতে ছবিতে এএসপি জাহান চরিত্রে দেখা গেছে তাসনিয়া ফারিণকে। আগে ঢাকা ও কলকাতায় সিনেমা করলেও (‘আরো এক পৃথিবী’, ‘ফাতিমা’) তিনিও বাণিজ্যিক সিনেমায় প্রথম। এ সিনেমায় পুলিশ অফিসারের লুকে তাঁকে দারুণ মানিয়েছে। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোয় তিনি চলনসই। তবে কিছু দৃশ্যে তাঁর আরও ভালো করার সুযোগ ছিল। বিশেষ করে তিনি যখন থানায় আসামি পেটাচ্ছিলেন, দেখে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
ইউসুফের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মিশা সওদাগর যথারীতি ভালো অভিনয় করেছেন। ইউসুফের বাবার চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু মানিয়ে গেছেন। শেষ দিকে বড় চমক ছিলেন শমশের ডাক্তারের চরিত্রে মোশাররফ করিম। অ্যাকশন দৃশ্যে তিনি যে খুব সাবলীল ছিলেন, তা বলা যাবে না। তবে এর চেয়ে বড় সমস্যা তাঁর অভিনীত চরিত্রটির হঠাৎ বিপ্লবী হয়ে ওঠার ভালো ব্যাখ্যা নেই সিনেমায়। এ সিনেমায় তাঁর ভূমিকা ঠিক কী, সেটা আরও ভালোভাবে বোঝানোর প্রয়োজন ছিল।