রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বখতিয়ার আলম ওরফে রনি আগে কিছুটা আয়েশেই থাকতেন। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হাসপাতালে। দ্বিতীয় শ্রেণির ডিভিশন (ডিভিশন-২) পাওয়া এই আসামি সে সময় নিজ বাসায় রান্না করা খাবার খেতেন।
তবে গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম (রনি) এখন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন। কারাগারের রান্না করা খাবার খেতে হচ্ছে তাঁকে। ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে একটি প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।
জোড়া খুনের এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বখতিয়ারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘বখতিয়ার আলম রনির পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে দুটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেছে, এর দায় আসামি এড়াতে পারেন না। তাই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’ যেভাবে জোড়া খুন
ঘটনার রাত পৌনে দুইটার দিকে বখতিয়ারকে বহন করা প্রাডো গাড়িটি নিউ ইস্কাটন রোডে যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় চালকের পাশের আসনে বসা নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার বিরক্ত হয়ে তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে চার–পাঁচটি গুলি করেন। বখতিয়ারের বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ ও মো. কামাল ওরফে টাইগার কামাল সে সময় গাড়ির পেছনের আসনে ছিলেন। তাঁরা আদালতে জবানবন্দিতে বলেন, বখতিয়ার পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এ ছাড়া ঘটনার আগে বখতিয়ারের সঙ্গে থাকা তাঁর আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমও আদালতে জবানবন্দি দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ব্যালিস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, বস্তুগত প্রমাণ, তদন্ত ও অন্যান্য সূত্র থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নিশ্চিত হয়, বখতিয়ারের এলোপাতাড়ি গুলিতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী (৪০) ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম (২৫) আহত হন। পরে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গাড়ির জানালা খুলে এক ব্যক্তি এলোপাতাড়ি চার থেকে পাঁচটি গুলি ছুড়েছেন। সূত্রবিহীন ওই মামলায় তথ্যপ্রযুক্তি ও দৈনিক জনকণ্ঠ কার্যালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে ঘটনার রাতে একটা প্রাডো গাড়ির (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৬২৩৯) বেপরোয়া চলাচল দেখা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিপত্র দেখে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নিশ্চিত হয়, গাড়িটি সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের। তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্য সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার আগে ও পরে বখতিয়ারের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত হয় ডিবি। পরে একই বছরের ৩০ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।