জীবন জীবিকার তাগিদে দেশের প্রায় সকল জেলার লোকজনের যাতায়াত রয়েছে গাজীপুরের টঙ্গীতে। বর্তমান টঙ্গীবাসী এবং বহিরাগতদের জন্য একটি আতঙ্কেতর নাম ছিনতাইকারী,টঙ্গীতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিনতাই হচ্ছে অন্যতম। বছরের প্রতিদিনই টঙ্গীর কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছেই, অতি সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সামনে ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারের ঈদে উত্তরবঙ্গসহ দেশের ২৬ টি জেলার মানুষ টঙ্গী দিয়ে তাদের নিজ জেলায় যাতায়াত করবে।
তাদের এই ঈদ যাত্রায় বড় আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারে ছিনতাইকারীরা।
তাছাড়া টঙ্গীর পশুর হাটে কুরবানীর জন্য পশু ক্রয় করার জন্য টঙ্গী ও তার আশেপাশের এলাকা সহ রাজধানী ঢাকা থেকে ও ক্রেতারা আসবেন,এই সমস্ত ক্রেতাদের কে টার্গেট করে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে।
গত ১৭ মে শুক্রবার রাত ১২ টায় রনজু (৩০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী কে টঙ্গীর উড়াল সড়কের বাটা গেইট এলাকায় ছিনতাইকারীরা এলোপাতাড়ি কুমিয়ে খুন করে। ১৮ মে শনিবার ভোরে টঙ্গী বাজার ফ্লাইওভারের উপর মোঃরবিউল (৩৮) নামে এক যুবক কে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরতর জখম করে তার সাথে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, আই ফোন-১৩ ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
১৪ মে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় তিন কিশোর মোটরসাইকেল চড়ে চাপাতি হাতে এক পথচারীকে আক্রমণ করে তার সকল কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে,ঘটনা রাস্তার পাশের একটি বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ভিডিও করা হয় এবং পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ভাইরাল হয়।এই ঘটনায় জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে, কারন দিনের বেলা এমন ব্যস্ততম সড়কে এরকম ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে তা খুবই উৎকণ্ঠার বিষয়।
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে প্রতিদিন উত্তরা থেকে নগরীর পুবাইলে আসা-যাওয়া করেন,১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টায় অফিস থেকে বেতনের টাকা,মোবাইল ও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সহ বাসযোগে উত্তরা থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড আাসার পর পরই ৭/৮ জন ছিনতাইকারী তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে,এসময় তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবারকের সাথে থাকা নগদ বিশ হাজার টাকা ও চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় পরবর্তীতে টঙ্গী পশ্চিম থানায় জিডি করেও অদ্যবধি কোন প্রতিকার পান নাই।
এরকম অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে,ছিনকারীদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ সদস্য,সাংবাদিক,ব্যবসায়ী,ছাত্র শিক্ষক, ইসলামিক বক্তা সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
ছিনতাইকারীদের হটস্পট হিসেবে রয়েছে,টঙ্গীর গাজীপুরা,এরশাদনগর,কলেজ গেট আউচ পারা,চেরাগ আলী,এর মধ্যে সবচেয়ী বেশী ছিনতাই হয় স্টেশন রোড,টঙ্গী বাজার এই দুই স্থানে। আগে রাতের বেলা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে দিনের বেলা ছিনতাইয়ের ঘটনা মামুলি ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে ছিনতাইয়ের ঘটনায় যাদের কে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে,শুধুমাত্র মাদকের টাকার জন্য তারা বিশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখে টঙ্গীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়,কারন বেশি সংখ্যক শিল্প কারখানা এবং সরকারি,আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কে এই তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করে থাকেন,আর ছিনতাই কারীরা ও এই ধরনের কর্মজীবী লোকদেরকে টার্গেট করে তাদের কাছ থেকে বেতনের টাকা সহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়,ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক উড়াল সেতুর আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী বাজার, টঙ্গী স্টেশন রোড,মিলগেইট,ও চেরাগ আলী স্টেশনে দিনে ও রাতের বেলা কিছু ভবঘুরে ও মাদকসেবিরা আড্ডা দেয়,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা দোকানী জানান,এই ভবঘুরে এবং মাদকসেবীরা ছিনতাইকারীদের ইনফর্মার হিসেবে কাজ করে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে বি,আর,টি এ প্রকল্পের উড়াল সড়ক যানবাহন ও জনগনের জন্য খুলে দিলেও কোন স্টেশনে নেই বৈদ্যুতিক বাতি,এমন কি উড়াল সড়কের গাজীপুর মুখী লেনে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও ঢাকা মুখী লেনে কোন ল্যাম্পপোস্ট নেই,এরমধ্যে ল্যাম্পপোস্টের অধিকাংশ বাতি রাতের বেলা জলে না,এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা নির্বিঘ্নে ছিনতাই করে বীর দর্পে পালিয়ে যেতে পারে।
উড়াল সড়কের নিচে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ও একই অবস্থা।
ছিনতাইকারীদের আস্তানা হিসেবে টঙ্গীর কো অপারেটিভ ব্যংকের মাঠ,কেরানীর টেক বস্তি, মাজার বস্তি,এরশাদনগর,টঙ্গী রেল স্টেশন এলাকা।
টঙ্গীতে ছিনতাইকারীদের রয়েছে বিশাল বড় সিন্ডিকেট, তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে থাকে।
ছিনতাই প্রতিরোধে একাধিকবার প্রতিবাদ সভা বিক্ষোভ সমাবেশ, মহাসড়ক অবরোধ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা, তবুও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।
টঙ্গীতে গণধোলাইয়ে একাধিক ছিনতাইকারী নিহত এবং আহত হওয়ার পরও ছিনতাই কমে নাই বরং বাড়ছে।
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫ উপলক্ষে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারনে ছিনতাইয়ের ঘটনা অনেকটা কমে গিয়েছিল।
এমন কি টঙ্গী পূর্ব এবং পশ্চিম থানা ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে প্রতিনিয়ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার পরও সাধারন মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নুর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন জানান,ছিনতাই ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সারা বছরই অভিযান পরিচালনা করে থাকে,ঈদ কে ঘিরে বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে,এর মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের টঙ্গি পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের ৪ টা মোটরসাইকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টাইগার’ মোবাইল পার্টি,ঢাকা-ময়মনসিং মহাসড়কের উড়াল সড়কের উপর একটি টিম এবং নিচে একটি টিম এভাবে ২ থানায় মোট চারটি টিম শিফট অনুযায়ী টহল দিবে।
এছাড়াও উড়াল সড়কের জন্য সবসময় দুইটা স্টাইকিং ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে,এডিসি থেকে শুরু ইন্সপেক্টর তদন্ত সকল অফিসারদের ২৮ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত রাত ১২ টা থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত মনিটরিং ডিউটি পালন করবে।
কোন অবস্থায় যেন কোন ধরনের ছিনতাই বা অপরাধমুলক কর্মকান্ড না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের পুলিশের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।।