কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয়েছে বলে শুনি নাই। কর তো আয়ের ওপর দেয়, ব্যয়ের ওপর নয়। তাহলে কর দিতে সমস্যা কোথায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্বকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন পেশাজীবী সংগঠন আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবি, বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভ্যাট প্রফেশনাল ফোরাম নেতারা অংশ নেন।
আলোচনায় জমির মৌজা মূল্য হালনাগাদকরণ প্রসঙ্গে আইসিএবির পক্ষ থেকে স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে ভূমির ও ফ্ল্যাটের বাজার মূল্যের তুলনায় মৌজা মূল্য কম হওয়ায় অপ্রদর্শিত অর্থের সৃষ্টি হচ্ছে। জমির ফ্ল্যাটের মৌজা মূল্য সময় সময় হালনাগাদপূর্বক ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। এর মাধ্যমে এনবিআরের রাজস্ব হ্রাস এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, মৌজা মূল্য হালনাগাদকৃত না থাকায় বিক্রয়কারীর সম্পদের প্রকৃত মূল্য প্রদর্শিত হচ্ছে না। ফলে ওই অপ্রদর্শিত সম্পদ ও সেটা থেকে অর্জিত আয় প্রতিফলিত হচ্ছে না। অপরদিকে অনেকাংশেই নিম্ন মৌজা মূল্যের ফলশ্রুতিতে ক্রেতাদের প্রকৃত আয়ের উৎস আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত হচ্ছে না। ফলে এনবিআর সারচার্জসহ অন্যান্য রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জমির প্রকৃত মূল্য মৌজায় নিয়ে আসার পক্ষে। তবে সমস্যা হচ্ছে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমরা কর ব্যাপক হারে কমাতে চাই। ধীরে ধীরে এটা ন্যূনতম করতে চাই, সমস্যা হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কী করবে। আমাদের কাজ আমরা করব। এ সময় কর কমিয়ে মিথ্যা তথ্যে জমি কেনার বিপক্ষে নিজের মত তুলে ধরেন তিনি।
স্নেহাশিস বড়ুয়া আরও বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠান দেশে ব্যবসা পরিচালনা করলেও অফিস না থাকায় তারা কর দিতে চায় না। বাংলাদেশে ব্রাঞ্চ কিংবা লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করলেও আয়ের ওপর কর দিচ্ছে না বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেবল উৎসে কর নিয়ে এনবিআরকে খুশি থাকতে হচ্ছে। চুক্তির ফাঁকফোকরে আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আবার বিদেশি বিভিন্ন প্রজেক্টের প্রযোজ্য কর সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়। এখানে বড় ধরনের কর ফাঁকি হয়। যেসব বড় বড় প্রকল্প অতীতে হয়েছে, সেগুলোতো বাংলাদেশেই হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কেবল উৎসে কর্তনের টাকা নিয়ে আমরা খুশি। আমাদের কি কেবল উৎসে কর্তনের টাকা নিয়ে খুশি থাকা উচিত? নাকি তাদের আয়ের ওপর কর আদায় করা উচিত? এটা আইনের সমস্যা নয়। এটা বাস্তবায়নের সমস্যা।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যারা চুক্তি তৈরি করে তাদের এটা বিবেচনা করা উচিত। এখানে ব্যাপক কর ফাঁকির সুযোগ আছে। সমস্যাগুলো চুক্তির ভেতরে। এ জায়গায় আমাদের বড় দিক-নির্দেশনা লাগবে। তিনি আরও বলেন, বড় বড় প্রকল্প ১ হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার। ব্যবসাটা তারা এখান থেকে করছে। কিন্তু কর চাপিয়ে দিচ্ছে এ দেশের সরকারের ওপর। এখান থেকে বের হওয়া উচিত।