ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন- ৩ এর উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলের ছত্রছায়ায় বিলিং সহকারী আরশাদ ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আরশাদ ইমামকে সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে ঢাকা ওয়াসা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে, ঢাকা ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান খান জানান, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অফিসিয়াল কাজের স্বার্থে বিলিং সহকারি আরশাদ ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন- ৩ এর উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলের ছত্রছায়ায় বিলিং সহকারী আরশাদ ইমাম আউটসোর্সিং পদে চাকুরি করে, জোনাল প্রধানের আশীর্বাদে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
২০২১ সালে মাত্র ২১,০০০/ টাকা বেতনের আউটসোর্সিং পদে যোগ দিয়ে আরশাদ ইমাম দ্রুতই দুর্নীতির জগতে প্রবেশ করেন। তৎকালীন আওয়ামীলীগের এমপি ইলিয়াছ মোল্লার রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে রাজস্ব জোন- ৩ এ নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেন। তখনকার উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সাঈদের সহযোগিতায় তিনি বিভিন্ন অভিজাত এলাকার কোডের দায়িত্ব পেয়ে রাজস্ব ফাঁকি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন।
দুর্নীতির দায়ে আবু সাঈদের বদলির পর ইব্রাহিম খলিল দায়িত্ব গ্রহণ করলে, আরশাদ ইমামের দুর্নীতির বিস্তার আরও বেগবান হয়। অভিযোগ রয়েছে যে, উপ- প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল মাসিক চাঁদা সংগ্রহ, জোন ও সাইট বদলি নিয়ন্ত্রণসহ প্রতিটি অপকর্ম আরশাদ ইমামের সহযোগিতায় করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়সা প্রশাসন হতে আরশাদ ইমামের বিষয়ে ডিসিআরও ইব্রাহিম খলিলকে সতর্ক করা হলে গত ১৬/০১/২৫ ইং তারিখে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোড ১০৭ হতে অব্যহতি দেওয়া হয়। কিন্তু ইব্রাহিম খলিল এর হস্তক্ষেপে ২২/০১/২৫ ইং তারিখে ৫ দিনের মধ্যে পূনরায় পূর্বের কোডের দায়িত্ব ফিরে পায়। বিষয়টি নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
বিল বাড়ানোর কথা বলে নিয়মিত হোল্ডিং তদন্তের নামে নানা অনিয়ম করেন ইব্রাহিম খলিল ও আরশাদ ইমাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর এলাকার এক বাড়ির মালিক বলেন, আমার বাড়িতে গত কিছুদিন আগে ইব্রাহিম খলিল ও আরশাদ ইমাম নামে ওয়াসার পরিচয় দিয়ে ২ ব্যক্তি তদন্ত করেন এবং বিল রিভাইজ হবে বলে হুমকি দিয়ে যান পরবর্তীতে আরশাদ ইমাম এসে বিষয় টি সমাধান করে দিবে বলে লক্ষাদিক টাকা হাতিয়ে নেন। সরকারি গাড়ি থাকার পরও, আরশাদ ইমামের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে এই কার্যক্রম চালানো হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতিকে গোপন রাখা। মাস শেষে সমস্ত অবৈধ আয়ের অংশ ভাগাভাগি হয় খলিল ও আরশাদের মধ্যে।
এছাড়া, আরশাদ ইমামের সঙ্গে অন্যান্য রাজস্ব পরিদর্শক/ বিলিং সহকারীদের সাথে মতবিরোধ হলে হোল্ডিং তদন্তের নামে হয়রানি করেন ইব্রাহিম খলিল। অথচ আরশাদ ইমামের দায়িত্বে থাকা এলাকায় ভুল করেও ভিজিট করেন না ইব্রাহিম খলিল। ফলে আরশাদ হয়ে উঠেন রাজস্ব জোন ৩-এর অঘোষিত উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।
নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন এক জোনে থাকা রাজস্ব পরিদর্শক ও বিলিং সহকারী বদলি হলেও ৫ বছর রাজস্ব জোন ৩ এ কাজ করছেন আরশাদ ইমাম। এতে করে তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট ভাঙা কারোপক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রমে অতিষ্ঠ কিন্তু আরশাদ ইমাম এর ভয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
সূত্র মতে, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে আরশাদ ইমাম রাজধানীর মিরপুরে ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছে। বিলিং সহকারী রাশেদ ইমাম (জোন ৬ এ কর্মরত)এবং আরশাদ ইমাম আওয়ামী নেতা এমপি ইলিয়াস মোল্লার পরিবারের আত্মীয় এবং একই সাথে বসবাস। এছাড়া আরশাদ ইমামের মাটিকাটায় পাঁচ কাঠার প্লট ও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় এবং ব্যাংকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
রাজস্ব জোন ৩-এর দুর্নীতির বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় একপর্যায়ে ইব্রাহিম খলিলকে জোন ১০-এ বদলি করা হয় এবং তার স্থলে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ইব্রাহিম খলিল আবারও তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী কে সরিয়ে জোন ৩-এ ফিরে আসেন, যা ইঙ্গিত করে যে, প্রশাসনও যেন এই দুর্নীতিবাজ চক্রের কাছে অসহায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজস্ব পরিদর্শক মন্তব্য করেন, “ডিসিআরও যদি সৎ হতো, তাহলে শাহ পরানের মতো সৎ কর্মারীর সঙ্গে সক্ষতা করত। কিন্তু সে আরশাদের মত চোর- দুর্নীতিবাজের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।” এতে প্রতিয়মান হয় যে, খলিলও দূর্নীতিবাজ। ডিসিআরও ইব্রাহিম খলিল এবং বিলিং সহকারী আরশাদ ইমাম চুরে চুরে মাসতুত ভাই। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে রাজস্ব খাতের এই লুটপাট চলতেই থাকবে। তাদের দুর্নীতির বিস্তারিত আসছে পরবর্তী রিপোর্টে।