দূর থেকেই আলাদাভাবে নজর কাড়ে নান্দনিক স্টলটি। প্রবেশপথে কয়েকটি কালো-সাদা চেয়ার দিয়ে তৈরি সোপানসদৃশ সজ্জা। দর্শনার্থীদের চোখ কিছুক্ষণের জন্য আটকে যায় ভিন্নধর্মী এ বিন্যাসে। কৌতূহলী অনেকেই কাছাকাছি এসে মুটোফোনে সেলফি বা ছবি তুলছেন। এমনই দৃশ্য চোখে পড়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ‘প্রিমিয়ার স্টল-৪২’-এ। এটি দেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাভানা ফার্নিচার লিমিটেডের স্টল।
রাজধানীর পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্যে সাজিয়েছে স্টল। বরাবরের মতো এবারের মেলায়ও অংশ নিয়েছে দেশের প্রথম সারির প্রায় সব কটি ফার্নিচার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এতে ২৩তম বারের মতো অংশ নিয়েছে স্বনামধন্য আসবাব ব্র্যান্ড ‘নাভানা ফার্নিচার’।
স্টলের বিশেষত্ব
এবার নাভানা ফার্নিচারের স্টলটি সেজেছে আভিজাত্যের রঙে। যেখানে আনন্দ, একতা ও সম্ভাবনার সেতু গড়ে তোলা হয়—চেষ্টা করা হয়েছে এমন একটি গল্প বলার। মূলত এটি ‘সীমাহীন সম্ভাবনা’কে সৃজনশীল উপায়ে তুলে ধরেছে। এখানে প্রতিটি উপাদান জীবনের আশা, ঐক্য ও সুখী জীবনের গল্প বলে। স্টলের সামনের দিকে সিলিং ডিজাইনে আধা সম্পূর্ণ ও খোলা লোহার কাঠামোর সমন্বয়ে একটি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। যা স্থিতিশীলতার সঙ্গে ভবিষ্যতের সীমাহীন সম্ভাবনার প্রতীক। এর ওপরে গুচ্ছ আলোর ব্যবহার আশার আলোকে প্রকাশ করে, যা জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পথ দেখায়।
আর চেয়ারের শিল্পসম্মত বিন্যাস ঐক্য ও সংযোগকে তুলে ধরে, যা প্রতিদিনের জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়। চেয়ারের বিন্যাসে ব্যবহার করা হয়েছে দুই ধরনের রং। যেখানে চেয়ারগুলো গাঢ় রঙের হলেও দুটি চেয়ার শুধু হালকা সাদা রঙের। এটি মূলত বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকে নির্দেশ করে। চেয়ারের এই বিন্যাসের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, একতাই আমাদের সমৃদ্ধি, বৈচিত্র্য ও শক্তির প্রতীক।
স্টলের সামনে ও চারপাশে বিভিন্ন আসবাবের আলোকিত প্রতীকসংবলিত দেয়ালটি গাঢ় রঙের, যা জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীরতা ও চ্যালেঞ্জকে প্রতিফলিত করে। যার সঙ্গে সামনের অংশে ছোট ছোট আলোর বিন্দু দিয়ে তৈরি ফার্নিচার সুখী ও আলোকিত জীবনযাত্রার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু স্টলেই নয়, তাদের প্রতিটি ডিজাইনেই এই প্রতিফলন ঘটায় নাভানা ফার্নিচার।
বাণিজ্য মেলায় নাভানার ফার্নিচারের সমাহার
বেডরুম, লিভিংরুম ও ডাইনিং রুম—তিনটি প্রধান ক্যাটাগরি ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য রয়েছে নাভানা ফার্নিচারের। যেমন হসপিটাল ফার্নিচার, ল্যাব ফার্নিচার, স্কুল ফার্নিচার, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, অফিস ফার্নিচার ইত্যাদি।
মেলা উপলক্ষে বিশেষ সমাহারের মধ্যে রয়েছে মেটালিক ডাইনিং টেবিল মার্বেল টপ, রাউন্ড মার্বেল টপ মেটালিক ডাইনিং টেবিল, এক্সক্লুসিভ প্রিমিয়াম পিউ লেদার আপলেসটেড সোফা, ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স ডাইনিং টেবিল, বেন্ড প্লাই সিরিজ ডাইনিং চেয়ার, হাইএন্ড মডার্ন কর্নার সোফা, কিডস সোফা, মাল্টিফাংশন ড্রেসিং টেবিল, টার্ন মেকানিজম সোফা, উডেন সোফা কাম বেড, স্লিক বেন্ড প্লাই মডার্ন উডেন বেড, মডার্ন উডেন ডাইনিং টেবিল ও মডার্ন সেন্টার টেবিল। এ ছাড়া অনেক মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার নিয়ে এসেছে নাভানা।
চলছে আকর্ষণীয় অফার
মেলা উপলক্ষে ক্রেতাদের জন্য ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ মূল্যছাড় চালু রয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য মেলা থেকে পণ্য কিনে ফ্রি হোম ডেলিভারি সুবিধাও পাচ্ছেন ক্রেতারা। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম (www.navanafurniture.com) থেকে ঘরে বসেই পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে ফার্নিচারে এক বছরের ওয়ারেন্টি ও পাঁচ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা (শর্ত সাপেক্ষে) প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি।
গুণগত মান ও সেবা
পণ্যের গুণগত মানে আপসহীন নাভানা ফার্নিচার। কাঠ, প্রসেস উড, লেমিনেশন বোর্ড, আমদানি করা লেকার ও উচ্চমানের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে পণ্য প্রস্তুত করা হয়। নাভানার ডিজাইন ও আরঅ্যান্ডডি টিমে ২২ জন ডিজাইনারের সমন্বয়ে পণ্যগুলোর নান্দনিকতা ও ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করা হয়।
যাত্রা শুরু থেকে সাফল্যগাথা
নাভানা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে নাভানা ফার্নিচার। শফিউল ইসলামের উদ্যোগে গড়ে ওঠা নাভানা গ্রুপের বর্তমানে ২৭টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। উৎপাদনশীলতাকে আরও উন্নত করতে নাভানা সাভারের রাজ ফুলবাড়িয়ায় স্থাপন করেছে একটি সুবিশাল কারখানা, যেখানে এক হাজারের বেশি দক্ষ শ্রমিক ও প্রকৌশলী কাজ করছেন। বর্তমানে সারা দেশে নাভানা ফার্নিচারের রয়েছে ছয়টি নিজস্ব শোরুমসহ ৬০টির বেশি ডিলার শোরুম।
গুণগত মান এবং ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে পরপর তিনবার সেরা ফার্নিচার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে নাভানা ফার্নিচার। এর মধ্যে ২৬তম ও ২৭তম বাণিজ্য মেলায় যথাক্রমে ‘বেস্ট ফার্নিচার স্টল’ ও ‘বেস্ট ফার্নিচার ম্যানুফ্যাকচারার’ পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
এবারের বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ, প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার ইয়ামিন রিখু বলেন, ‘নাভানা ফার্নিচার বরাবরই বাণিজ্য মেলায় নতুন পণ্য নিয়ে আসে। পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের ডিজাইনে স্টল-সজ্জা করে। এখানে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, বিক্রির চেয়েও নতুন আসবাব প্রদর্শনী এবং ফার্নিচারের নতুন ডিজাইন সম্পর্কে কাস্টমারদের অবগত করা। গতবারের চেয়েও এবার ভালো সাড়া পাচ্ছি আমরা। কাস্টমাররা অনেক কেনাকাটাও করছেন। আশা করি, যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের বাণিজ্য মেলায় নাভানা ফার্নিচার কাস্টমারদের চাহিদার শীর্ষে থাকবে।’
নাভানা ফার্নিচার লিমিটেড বাংলাদেশের আসবাবশিল্পের একটি গর্বিত নাম। গুণগত মান, নান্দনিক ডিজাইন এবং ক্রেতা সন্তুষ্টি প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশে সফলতার পথ ধরে এগিয়ে চলবে—এমনই প্রত্যাশা ফার্নিচারপ্রেমীদের।