কৃষকের জন্য নেয়া ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পই হয়ে দাঁড়ায় কৃষকের গলারকাটা। ‘যন্ত্রের যাতাকলে কৃষক’ শীর্ষক একটি বেসরকারি টেলিভিশন (চ্যানেল 24) এর অনুসন্ধানে উঠে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেয়া সেই প্রকল্পের অভিনব জালিয়াতি। যার সত্যতা মেলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও। এসব অনিয়ম জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তৎকালিন প্রকল্প পরিচালকসহ ৮ জনকে।
কম খরচে, দুর্যোগ এড়িয়ে দ্রুত কৃষককের খেতের ধান গোলায় ভড়তে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প নিয়েছিলো বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু মহাদুর্নীতির মাধ্যমে এই প্রকল্প শুধু ভেস্তেই যায়নি, কৃষকেরও সর্বনাশে ডেকে আনেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে টানা পাঁচ মাসের অনুসন্ধানে অনিয়ম দুর্নীতির নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে ওই চ্যানেলটি।
‘যন্ত্রের যাতাকলে কৃষক’ শীর্ষক অনুসন্ধানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, আমদানি না করেই কোম্পানিগুলো কিভাবে কৃষককে যন্ত্র দেয়ার নামে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে, লুটে নেয় ভর্তুকির টাকা এবং টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে নিন্মমানের যন্ত্র গছিয়ে দেন কৃষকের হাতে।
চ্যানেলটির সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তদন্তে নামে কৃষি মন্ত্রণালয়। টানা ২ মাসের তদন্ত শেষে সাবেক প্রকল্প পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলামসহ কৃষি ক্যাডারের ৮ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, প্রচার করা প্রতিবেদনের সত্যতা মিলেছে। এবং এর সঙ্গে ৮ জনের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা আমরা পেয়েছি। সেই আট জন কর্মকর্তাকে আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি।
কিন্তু যে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশে নিম্নমানের যন্ত্র কৃষকদের গলার কাটা বানানো হলো, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়? এমন প্রশ্নে কৃষি সচিব জানান, অধিকতর তদন্তে গঠিত হয়েছে, আরও একটি কমিটি।
ড এমদাদ উল্লাহ মিয়ান আরও বলেন, এনবিআরের তথ্যে কিছু গড়মিল পেয়েছে। যেসব কোম্পানির মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছে সেখানে তথ্যগত কিছু বিভ্রান্তি আমার দেখেছি। তাই সেগুলো আমরা যাচাইবাছাই করছি। পুরো বিষয়টি ডিটেল তদন্তের জন্য আমরা এটি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হচ্ছে।
দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের এই উদ্যোগ ভন্ডুল কর্মীদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কথা বললেন সংশ্লিষ্টরা।