পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে খাজনা বন্ধের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
এতে ঢাকার সূত্রাপুর মৌজার ভূমি অবমুক্তি করা ও আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অবৈধ পরিপত্রটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করে পুনরায় খাজনা আদায়ের জন্য অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটি।
এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন মজিবুর রহমান খান, সাংবাদিক মোহাম্মদ মহসীন ও রেজাউল করিম বাবুসহ অন্যান্যরা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী, শ্যামপুর, কোতয়ালী ও এর আশপাশ থানাধীন এলাকাগুলোর এক বিরাট অংশের প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বাড়িঘর, জায়গা-জমি ও পৈতৃক সম্পত্তির নামজারি করতে পারছে না। অথচ তাদের এসএ, সিএস, আরএস ও সর্বশেষ সিটি জরিপের পর্চায় তাদের নিজের অথবা বাবা, দাদা বা পৈতৃকদের নামে রেকর্ডও রয়েছে।
সরকার খাজনা না নেওয়ায় বিগত ১৩ বছর ধরে তারা মহাবিপদে ও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে ৭০-৮০ বছর পর সূত্রাপুর মৌজার ৫৪৮ তৌজির ৩০ লক্ষাধিক মানুষের স্ব স্ব বাড়িঘর, জায়গা-জমি ও সম্পত্তিকে অবৈধভাবে খাসমহল ও লিজের নামে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা নেওয়া বন্ধ করে রেখেছে।
ফলে পুরনো ঢাকার ৩০ লক্ষাধিক মানুষ তাদের বাড়ি ও জমি এবং পৈতৃক সম্পত্তিসমূহের নামজারি করতে পারছে না, খাজনাও জমা নিচ্ছে না। জমি হস্তান্তর, জমি ক্রয়-বিক্রয় ও রেজিস্ট্রি করতে পারছে না। এমনকি বাবা-মা’র মৃত্যুর পর ওভারিশরা বাড়িঘরের ভাগাভাগি বা বণ্টননামা, হেবা রেজিস্ট্রিও করতে পারছে না। এ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্লান পাসও হচ্ছে না। নিজ জমিতে ভবণ নির্মাণ করতে পারে না এবং ব্যাংক থেকে ঋণও নেওয়া যায় না। ফলে পুরান ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারও হচ্ছে না এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমির নামজারি না করা এবং ভূমি উন্নয়ন কর না নেওয়ার কারণে সরকার নিজেও প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০১১ সালের পর থেকে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ঋণ নিয়ে এ সকল এলাকাতে ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করেছে, এখন তারা ঋণের বোঝায় জর্জরিত। তারা শুধু বিপদে নয়, প্রচুরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষভাবে উল্লেখ্য থাকে যে, পুরান ঢাকার ৩০ লক্ষাধিক মানুষ তাদের ভূমির খাজনা যুগ যুগ ধরে পরিশোধ করে আসছে। ২০১১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৮ এক পরিপত্র দ্বারা পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর মৌজার খাজনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা ছিল একবারে অবৈধ এবং অমানবিক।