অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গতকাল রবিবার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। একই দিনে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গতকাল ঢাকায় তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৃথক সময়ে এ দুটি সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীর গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। প্রধান উপদেষ্টাও সেনাপ্রধানকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য অভিবাসন ব্যয় কমাতে সহায়তা করতে সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূত লোকে জানান, ‘বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, যা ফেরত আনতে আমাদের সিঙ্গাপুরের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত লো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য নিয়োগের খরচ কমানোর লক্ষ্যে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে চান। তিনি জানান, প্রবাসীরা যেন আরও বেশি অর্থ তাদের পরিবারকে পাঠাতে পারে, এ জন্য সরকারের লক্ষ্য অভিবাসন ব্যয় কমানো। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে নিয়োগের খরচ কমানোর জন্য একটি মডেল কাঠামো তৈরি করতে পারি।’
এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে হাইকমিশনার লো বলেন, সিঙ্গাপুরও অবৈধ অর্থ আদান-প্রদান রোধ করতে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশকে বৈদেশিক নিয়োগ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করার পরামর্শ দেন, যাতে মানবপাচার ও শ্রমিক শোষণের আশঙ্কা কমে যায়।
সাক্ষাৎকালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, পররাষ্ট্রনীতি, শিপিং, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করেছে এবং এখন এটি ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর ফ্রান্সিস চং জানান, বাংলাদেশ ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। এফটিএর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং উভয় দেশ এখন কীভাবে আলোচনা শুরু করা যায়, তা নিয়ে কাজ করবে। হাইকমিশনার লো জানান, সিঙ্গাপুর পানি শোধন এবং বর্জ্য শক্তি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাদের দক্ষতা ভাগাভাগি করতে প্রস্তুত। তিনি উভয় দেশের খাদ্য সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।
গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালিব এস এম সালিমান। এ সময় দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিয়োগ, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ নানা বিষয়ে কথা হয়।