ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামে। পানির তোড়ে আখাউড়া আগরতলা সড়কের একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে গেছে। এতে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে এক গর্ভবতীর মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। একপর্যায়ে আখাউড়া স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, অমরপুর, রহিমপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগর, কর্নেল বাজার, মোগরা মনিয়ন্দসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু। পানিবন্দি মানুষগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
এদিকে আখাউড়া বীরচন্দ্রপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ঘরে বানের পানি ঢুকে পড়ায় তাড়াহুড়ো করে সরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে তিনি পানিতে ডুবে যান।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন।
এর আগে মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থীরা বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমরান চৌধুরী জানান, সকাল থেকে পানিবন্দি মানুষের উদ্ধার করে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। তারা প্রত্যেকেই এলাকাভিত্তিক বিভক্ত দল হয়ে পানিবন্দি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।
যতক্ষণ বন্যা পানি সরে না যাবে ততক্ষণ বানভাসি মানুষের পাশে থাকার কথা জানান তিনি।
এদিকে আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা শিরীন আক্তার ও সায়েরা বেগম জানান, কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পানির স্রোতে বাড়ি-ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন আশ্রয়কেন্দ্রে মাথা গুঁজেছেন।
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. জাহের মেম্বার জানান, ভারতীয় পানির তোরে বীরচন্দ্রপুর, অমরপুর, রহিমপুর, কালিকাপুর গ্রাম তলিয়ে গেছে। তার এলাকার ৪০টি পরিবার পানিবন্দি বলে জানান তিনি।
পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন শেষে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানান, ৩৪টি গ্রামের মোট ৫২০টি পরিবার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রাণ চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পরই ত্রাণ তৎপরতা শুরু হবে।