অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা সবাই আবু সাঈদ। আবু সাঈদের মা সবার মা। এটা আবু সাঈদের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে হেলিকপ্টারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুরের পীরগঞ্জে যান। সেখানে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত এবং বিশেষ মোনাজাতের পর তিনি আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে স্বপ্নের জন্য আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়েছিলো, সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সারা জাতির কর্তব্য। কোটি কোটি ছেলে মেয়ে ভয় না পেয়ে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো, তারা পথ দেখিয়ে গেছে। তাদের কারণে নতুন বাংলাদেশ পেলাম। এই বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের।
তিনি বলেন, ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে আবু সাঈদের কথা পড়বে। আমি ন্যায়ের জন্য লড়বো, বুক পেতে দেবো। এখন ঘরে ঘরে আবু সাঈদ। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার ঘরের সন্তান আবু সাঈদ।
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যাদের ঘরে সন্তান আছে তারাই এখন বলছে আমি আবু সাঈদ হবো এবং তার পথ অনুসরণ করে অনেক সন্তান নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। এখন সবাই প্রতিবাদ করছে। সুতরাং আপনারা খেয়াল রাখবেন কোথাও যেন গোলযোগ না হয়। এই সন্তানদের রক্ষা করা এখন আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করতে পারি। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সবাই দাঁড়াব যেমনটা আবু সাঈদ দাঁড়িয়েছে প্রতিবাদে। আমরা আজকে যে উদ্দেশে এসেছি সেটা যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।
তিনি বলেন, কেউ যেনো ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা না বলে। কারণ আমরা এই মাটিরই সন্তান। সবাই আমরা আবু সাঈদ। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করতে সামনে গিয়ে দাঁড়াই। আবু সাঈদ যেরকম দাঁড়িয়েছে, আমাদেরও সেরকম দাঁড়াতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশি, বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা, সবার মা আবু সাঈদের মা। এখানে যারা আছে (আবু সাঈদের পরিবার) তাদের রক্ষা করতে হবে। তার মা আছে, বোনরা আছে, তাদের রক্ষা করতে হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের আগমন উপলক্ষে রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও সেখানে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়নি।
উল্লেখ্য, নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। পরদিন ১৭ জুলাই তাকে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।