জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো নামাজিদের সঙ্গে।’ অর্থাৎ তোমরা জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করো। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজে ২৭ গুণ বেশি পুণ্য নিহিত রয়েছে’ (সহিহ বোখারি)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একা নামাজ পড়া অপেক্ষা দুজনে জামাতে নামাজ পড়া উত্তম। দুজন অপেক্ষা বহু জন মিলে জামাতে নামাজ পড়া আল্লাহর কাছে আরও বেশি পছন্দনীয় ও উত্তম’ (আবু দাউদ)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়বে, সে অর্ধরাত ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়বে, সে পূর্ণ রাত ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি)
রাসুল (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাত ছাড়া আদায় করতেন না। এমনকি অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি হাঁটতে পারতেন না, তখনো দুই সাহাবির কাঁধে ভর করে পা টেনে টেনে নামাজের জামাতে হাজির হয়েছেন। তবুও জামাতবিহীন একা একা নামাজ পড়েননি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার তো মনে চায় মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলে কাউকে নামাজ পড়াতে বলি। আর আমি আগুনের অঙ্গার নিয়ে বের হই এবং যে আজান শোনার পরও মসজিদের জামাতে হাজির হওয়ার জন্য বের হয়নি, তার ঘর জ্বালিয়ে দিই।’ (সহিহ বোখারি)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোথাও যদি তিনজন মানুষ থাকে আর তারা যদি জামাতে নামাজ না পড়ে, তাহলে শয়তান তাদের ওপর বিজয়ী হয়ে যাবে। কাজেই তুমি জামাতে নামাজ পড়াকে কর্তব্য মনে করো’ (নাসায়ি)। তিনি আরও বলেন, ‘সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিশাপ, যে আজান শুনেও জামাতে উপস্থিত হয় না’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ)। চিন্তার বিষয় হলো, রাসুল (সা.) যেখানে জামাতে অনুপস্থিত মুসল্লির ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা করেছেন, সেখানে যে নামাজই পড়ে না, তার শাস্তি যে কত ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমরা কোনো সাহাবিকে জামাত থেকে অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। জামাত থেকে সেই ব্যক্তিই অনুপস্থিত থাকতে পারে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিও দুজনের সাহায্যে জামাতে এসে হাজির হতো। রাসুল (সা.) হেদায়াত ও নাজাতের যে রাস্তা আমাদের দেখিয়েছেন, তাতে আজান শুনে মসজিদের জামাতে হাজির হওয়াও অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়, সে যেন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। কারণ আল্লাহতায়ালা স্বীয় নবীকে হেদায়াতের যে তরিকার তালিম দিয়েছেন, তাতে বিশিষ্টভাবে এটাও আছে, যে ব্যক্তি মুনাফিকের মতো মসজিদে না গিয়ে ঘরে একা নামাজ পড়ে, সে তার নবীর তরিকাকে ছেড়ে দিল। আর যে নবীর তরিকাকে ছেড়ে দিল, সে পথভ্রষ্ট। (সহিহ মুসলিম)
হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, উম্মতে মুহাম্মদির জন্য জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে বলে আমি জানি না’ (সহিহ বোখারি)। জামাতে নামাজ পড়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটা হানাফি মাজহাব অনুসারে সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলেও আমলগতভাবে ওয়াজিব। এটা ইসলামের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, ঐক্যবদ্ধতা প্রকাশ পায় এবং পারস্পরিক খোঁজখবর নেওয়া সহজ হয়। সাহাবায়ে কেরাম যখন আজান শুনতেন তখন দোকানপাট বন্ধ করে মসজিদে হাজির হতেন।
আমাদের ওপর কর্তব্য হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। প্রথম সারিতে ইমামের পেছনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। প্রথম কাতার দ্বিতীয় কাতার থেকে উত্তম। দ্বিতীয় কাতার তৃতীয় কাতার থেকে উত্তম। তাই আগের কাতারে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ যখন জামাতের ওপর স্বীয় রহমত নাজিলের ইচ্ছা করেন, প্রথমে ইমাম থেকে শুরু করেন। তারপর সেই মুসল্লির ওপর রহমত নাজিল করেন, যে সরাসরি ইমামের পেছনে থাকে। তারপর তাদের ওপর যারা প্রথম কাতারে ডানদিকে থাকে। তারপর তাদের ওপর যারা প্রথম কাতারে বামদিকে থাকে। এজন্যই যে ব্যক্তি ইমামের সরাসরি পেছনে থাকে, সে একশ নামাজের পুণ্য লাভ করে। যে প্রথম কাতারে ডানদিকে থাকে, সে পঞ্চাশ নামাজের পুণ্য লাভ করে। আর যে প্রথম কাতারে বামদিকে থাকে, সে পঁচিশ নামাজের পুণ্য লাভ করে।