24ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ সব কার্যক্রম সোমবার বন্ধ ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম ছিল। এদিকে কারিগরি বোর্ডের মঙ্গলবারের দুটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মারা গেছেন ১০ জন। আর মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব এলাকায় বন্ধ ছিল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে শিক্ষার্থীদের সকাল শিফটে উপস্থিত ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। আর বিকালে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখা গেছে। ঢাকার মনিপুর স্কুলেও সকালে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। বিকালে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে সকালে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশ। বিরামহীন বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে বিকাল শিফটে এ স্কুলের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা-ইন-ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি শিক্ষাক্রমের ২৮ মে মঙ্গলবারের সব পরীক্ষা ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী পরীক্ষাসমূহ যথারীতি চলমান থাকবে। এছাড়াও স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরবর্তী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে সাড়ে ৩৬ হাজার ঘরবাড়ি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘর। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাসেবা দিতে ১ হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে সক্রিয় আছে ১ হাজার ৪০০ টিম। দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য সব মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করা হবে। এখনো কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি থাকবে। তাই ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জনভোগান্তি শিগগিরই কমছে না। পাশাপাশি দুর্যোগ কবলিত এলাকায় বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রোববার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে জানানো হয়েছে। তবে স্কুলগুলো খোলা থাকবে। কর্তৃপক্ষ স্কুলে থাকবে যাতে মানুষ এলে আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু ক্লাস বন্ধ থাকবে। শুধু আশ্রয়ের জন্য। এটা শুধু উপকূলের জন্য। এছাড়া স্ট্যান্ডিং অর্ডার অনুসারে, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি যেসব অবকাঠামো আছে সেগুলো ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেবেন। সেভাবে তারা সেসব ব্যবস্থা নেবেন।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার রাত ৮টার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপক‚ল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপক‚লের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হয়।