কোথাও চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ তো কোথাও রুক্ষ উষর মরুভূমি। কোথাও আবার পর্বত ভেদ করে তন্বী গতিতে ছুটে চলেছে জলপ্রপাত। লাল বালুর দীর্ঘ সমুদ্র তটে আছড়ে পড়ে সাগরের ঢেউ। সহজ সরল কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের উজ্জ্বল উচ্ছল প্রাণখোলা হাসিও যেন মন কেড়ে নেবে যে কারও। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের কথা শুনেই এ দেশ যে আফ্রিকার কোথাও তা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন। কিন্তু বিরাট বড় আফ্রিকার কোথায় তার অবস্থান সেটি হয়তো ধারণা করতে পারছেন না।
আসলে এ এক এমনই দেশ, যা বিখ্যাত হর্ন অব আফ্রিকা বা আফ্রিকার শৃঙ্গ খ্যাত অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অঞ্চল। আরব সাগরের পশ্চিম বাহু এডেন উপসাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ১২০ বর্গকিলোমিটারের এ দেশের নাম সোমালিল্যান্ড অর্থাৎ জনজাতি সোমলিদের ভূমি। এর উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে জিবুতি, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ইথিওপিয়া এবং পূর্বে মূল সোমালিয়া রাষ্ট্র অবস্থিত। ১৮৮৪ সালে মিশরীয়দের কাছ থেকে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই দেশটির এমন নামকরণ। যা ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সোমালিল্যান্ড নামেই পরিচিত ছিল।
নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বলে দাবি করা সোমালিল্যান্ডের রাজধানীর নাম হারগেইসা। সরকারি ভাষা সোমালি, আরবি এবং ইংরেজি। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি। অর্থাৎ ১৯৯১ সালের ১৮ মে স্বাধীনতা পেয়েও সোমালিল্যান্ডের মানুষ আজও স্বাধীন দেশেরও স্বীকৃতি পায়নি। কারণ ওই বছর সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের পতনের পর সোমালিল্যান্ডের আঞ্চলিক দল নিজেদের ভূখণ্ডকে স্বাধীন ঘোষণা করে। এরপর থেকে এখনও তাদের রয়েছে নিজস্ব সরকার, সংবিধান, সেনাবাহিনী ও পুলিশ ব্যবস্থা। শুধু নেই স্বীকৃতি। রাজনৈতিক কারণে কোনো দেশই এখন পর্যন্ত সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়নি।
সোমালিয়া শব্দটি এলেই আমাদের অনেকেরই মানসপটে ভেসে ওঠে যুদ্ধ হানাহানি আর জলদস্যুদের কথা। কিন্তু এই সোমালিয়া আর সোমালিল্যান্ড এক নয়। বরং সোমালিল্যান্ড অনেক শান্তপূর্ণ একটি দেশ। সেখানে নেই কোনও জলদস্যু সমস্যা এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগ। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সম্পদে পরিপূর্ণ দেশটির প্রধান সমস্যা দারিদ্র। বিগত কয়েক বছর ধরে মার্কিন ডলারের তুলনায় সোমালিল্যান্ডের অফিশিয়াল মুদ্রা শিলিংয়ের মান এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, আদতে এর আর কোন মূল্যই অন্য দেশে নেই। সেখানে এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ২০০০ সালে পাওয়া যেত ১০ হাজার শিলিং। ২০১৭ সালে অবশ্য এই পরিমাণ সামান্য কমে দাঁড়ায় নয় হাজার শিলিংয়ে। তাই অনেকেই বলেন সোমালিল্যান্ডের বাজারে শিলিংয়ের জন্য আলাদা করে লাগেনা কোনও নিরাপত্তা। সেখানে এখনও বাজারে বস্তা বস্তা ভরে বিক্রি হতে দেখা যায় শিলিং। যে কেউ চাইলেই ডলার বা ইউরো খরচ করে বস্তা ভর্তি শিলিং বাড়িতে নিয়ে আসতে পারবেন।
গোটা সোমালিয়া অঞ্চলেরই মানুষের প্রধান পেশা কৃষি আর পশুপালন। সোমালিল্যান্ডও গরু ও উটের মাংস রপ্তানির জন্য আফ্রিকায় বিখ্যাত। তবে দারিদ্র, বিনিয়োগের অভাবের কারণে এখনও সোমালিল্যান্ডে বহু জমি পড়ে আছে অনাবাদি অবস্থায়। এখানে যে বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করবে তার প্রধান অন্তরায় আসলে অবকাঠামোর অভাব এবং নিরাপত্তা। তবে আফ্রিকার অন্য দেশগুলোর মতো সোমালিল্যান্ডে যেহেতু এখনও গৃহযুদ্ধ বা অন্য বড় কোন সমস্যা এখনও নেই, সেহেতু সেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের চিন্তা করছে বিভিন্ন দেশ। এরইমধ্যে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড সোমালিল্যান্ডে কার্যক্রম প্রসারিত করে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলটিকে আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে। এরইমধ্যে সেখানে এডেন উপসাগরকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে বারবেরা বন্দর। এছাড়া স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নেও কর্মসংস্থান তৈরিতে চেষ্টা চলছে নিরন্তর। বাংলাদেশ সরকারও দেশটিতে ব্যবসায়ীক লাভের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে পারে।
ব্রেকিং নিউজ
- ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে শান্ত, মুশফিকের ১ রানের আক্ষেপ
- ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ থামিয়েছি’, নোবেল পুরস্কার দাবি করলেন ট্রাম্প নিজেই
- ধস নামছে ইরান-ইসরায়েলের অর্থনীতিতে
- ইরানে ভূকম্পন নাকি গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা ?
- ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গেছে আর এই সরকার ১০ মাসেও কিছু করতে পারছে না
- আমি খেলার মধ্যে রাজনীতি আনার পক্ষে কোনো দিনই নই: বিএনপি মহাসচিব
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ৪৪ টি জিয়া ট্রি রোপন
- ভোকাল, প্রভাবশালী, নেতৃত্বাধীন নারীই বেশি শেমিংয়ের শিকার হয়: রেজওয়ানা